রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া নিয়ে যখন বাংলাদেশ কাজ করছে, ঠিক তখনই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অবশিষ্ট বসতবাড়ি, কাঠের কুটির ও জনবসতি নিশ্চিহ্ন করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষী (বিজিপি) ও উগ্রপন্থী নাডালা’র সম্মিলিত যৌথবাহিনী।
গত শুক্রবার রাত থেকে এইসব বাহিনীরা রাখাইনের বুচিডং জেলার ওলাফে ও তংপাড়াতে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু করেছে বলে রোহিঙ্গাদের সূত্র জানিয়েছেন। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, অভিযানে আটক করা হয়েছে শতাধিক রোহিঙ্গাকে। স্থানীয় রাখাইনদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রোহিঙ্গা গ্রামে অভিযান চালায় কয়েক শ’ সেনা ও উগ্রপন্থী নাডালা বাহিনী। এসময় গ্রামের রোহিঙ্গারা দিগি¦দিক ছুটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেনা সদস্যরা ভাংচুর করে রোহিঙ্গার বসতবাড়ি। পলায়নরত শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে বন্দি করে রাখে তংপাড়ার স্কুল ঘরে।
রোহিঙ্গাদের দাবি, বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরলে যাতে নিজেদের বসতবাড়ি ফিরে না পায় সে কারণে উচ্ছেদ করছে প্রশাসন।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব রোহিঙ্গা গ্রাম ২৫ আগস্টের হামলার পর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেসব গ্রামের অক্ষত বসতবাড়িগুলো ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। বোলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানান, আটকৃতদের বেদঢ়ক প্রহার কওে সেনারা। এসময় অত্যাচারিত রোহিঙ্গাদের আর্তচিৎকারে সোরগোল পড়ে যায় ওই এলাকায়।
উক্ত গ্রামের রোহিঙ্গাদের যেসব বাড়ি এতদিন অক্ষত ছিল। এখন সেসব গুড়িয়ে দিচ্ছে যৌথ বাহিনী। লুট করে নিচ্ছে গোলা ভরা ধান ও মাঠের অন্যান্য ফসল। গ্রামের অধিকাংশ রোহিঙ্গা সেনানিপীড়ন থেকে বাঁচতে আগেই বাংলাদেশ পালিয়ে গেছে। আবার অনেকে জীবন বাজি রেখে পাহাড়-জঙ্গলে লুকিয়ে গ্রামে রয়ে গেছে। পরে পরিস্থিতি শীতল হলে তারা নিজ বাড়িতে ফিরে। এখন সেসব রোহিঙ্গাদেরও বের করে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সদ্য পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পাদন হলেও মিয়ানমারের রাখাইনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে সেখানে বসবাসরত সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
মিয়ানমারের রাচিডং বাজারবিল থেকে ৭ সদস্যের পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ নুর (৪৫) জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হওয়ায় সেখানকার উগ্রপন্থী রাখাইন জনগোষ্ঠী প্রত্যাবাসন বিরোধী মিছিল করেছে।
রাচিডং উপরের পাড়া গ্রাম থেকে ৮সদস্যের পরিবার নিয়ে আসা আব্দুস সালামের ছেলে মো: হাশিম (৪৩) জানান, বর্তমানে রাখাইনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে সেখানে রোহিঙ্গাদের বসবাস করা সম্ভব নয়। কারণ উগ্রপন্থী রাখাইন সম্প্রদায়ের যুবকেরা দা, কিরিচ হাতে নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে হানা দিয়ে লুটপাট চালাচ্ছে।
রাচিডংয়ের কাংগারা পাড়া থেকে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে আসা সেখানকার মসজিদের মোয়াজ্জেম হোছন আহাম্মদ (৩৯) জানান, তারা ভয়ভীতি মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজ বাড়িতে ছিলেন। তাদের পার্শ্ববর্তী অনেকেই এদেশে চলে এলেও দারিদ্র্যতার কারণে তারা আসতে পারেননি। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাখাইনে যে ভয়াবহ তাণ্ডব চলছে তাতে যেকোনো সময়ে অঘটন ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন