চিকিত্সক অলক (ছদ্মনাম)। ছোট বেলা থেকেই অদম্য মেধাবী। বড় হয়ে চিকিত্সক হওয়ার স্বপ্ন তার। স্বপ্নটা ছিল পরিবারেরও। স্বপ্নের পথে ছুটে চলা নামক একটি প্রথম শ্রেণির সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চান্সও পেয়ে গেলেন। এখন একজন ভালো চিকিত্সক হওয়ার পালা। ভালো ডাক্তার হতে হলে, ভালো জানতে হবে। জানতে হলে তাকে পড়তে হবে ভালো করে। আর এজন্য পড়ার টেবিলে সময়টা একটু বেশিই দিতে হবে। দিনের বেলা পড়ার সময় কই। জাগতে হবে রাতে। যদিও রাত জেগে পড়ার অভ্যাস একদমই নেই। যেভাবেই হোক চোখের পাতা বুঝতে দেয়া যাবে না। চা, কফি খেয়েও কোন কাজ হয়নি। এভাবে শত চেষ্টা ব্যর্থ হয় মেধাবী শিক্ষার্থীর।
এদিকে প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষাও তার দরজায় কড়া নাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে টেনশনে আছেন তিনি। এরই মধ্যে পরামর্শ নিলেন একই মেডিক্যাল কলেজের এক সিনিয়র ভাইয়ের। ওই সিনিয়র তাকে ইয়াবা সেবন করতে বলেন। কারণ হিসেবে বলেন, ইয়াবা খেলে চোখে ঘুম আসে না। সারা রাত জাগলেও শরীরে কোন ক্লান্তি থাকবে না, চোখও বুঝে না, ধরাও পড়ে না। ওদিকে পড়াও থাকে মনে। সে নিজেও প্যাকটিস করেছে। ফলও নাকি মিলেছে। এজন্য তাকেও পরামর্শ দিয়েছে। কথাটি তাকে গোপন রাখতে বলা হয়েছে।
ওই বড় ভাই তাকে আসরে আসতে বলে। তারা প্রতিদিন আসর মিলায়। আসরে সবাই মেডিক্যালের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা আসলেই আসরে লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যায়। তবে কোথায় পাবেন ইয়াবা এমন প্রশ্ন করলে ওই ভাই তাকে বলে, ওইসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। তুমি শুধু ১ হাজার টাকা নিয়ে এসো। পরের দিনের আসরে যোগ দেয় অলক। রাজধানীর একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে এভাবেই ইয়াবা জগতে পা বাড়ানোর গল্প বলছিলেন এক সময়ের মেডিক্যালের ওই মেধাবী শিক্ষার্থী।
তিনি এখন পুরোদমে ডাক্তার। চিকিত্সা পেশার সাথেও জড়িত আছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। চিকিত্সা দেয়ার পাশাপাশি নিজেও গত চার বছর ধরে চিকিত্সা নিচ্ছেন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। ডাক্তার হয়েও ছাড়তে পারেননি নেশাদ্রব্য ইয়াবা। এখন চিকিৎসায় তার মন বসে না। ইয়াবা ছাড়া অন্য কিছু ভালো লাগে না। তবে ইয়াবা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান তিনি। বললেন, আমি ভালো হতে চাই। বহু চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছি না। আমার চারদিকে শুধু ইয়াবা। আমি স্বাভাবিক থাকতে পারি না। ইয়াবা আমাকে সব সময় টানছে।
পরিবারের লোকজন জানায়, তার স্ত্রীও ছিলেন ডাক্তার। বিয়ের পর পরই স্ত্রীর সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। কথায় কথায় স্ত্রীকে গালমন্দ, গায়ে হাত তোলা ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। অত্যাচার সইতে না পেরে তালাক দিয়ে চলে গেছেন তার স্ত্রী। ইয়াবার কারণে ভেঙ্গে গেছে ডাক্তার দম্পতির সংসার।
ইয়াবা আসক্ত ডাক্তারের ভাষ্যে, চিকিত্সা পেশায় তার মতো এ রকম অনেক ডাক্তার আছেন যারা ইয়াবা আসক্ত। ছাত্র জীবনে তার মতো অনেকে না বুঝে ইয়াবা সেবন করে পেশায় ঢুকে ছাড়তে পারেন না। ফলে পেশায় তাদের মনোযোগ থাকে না। এমনকি ভুল চিকিৎসার অন্যতম কারণ এটি বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমি তো মরছি। না বুঝে সেবন করেছি। আমি চাই না আমার মতো কেউ এ পথে পা বাড়াক। তার মতো ভুল করে কোন মেডিক্যালের শিক্ষার্থী যেন ইয়াবা সেবন না করে সে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ইয়াবা নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে ইয়াবা আসক্ত ওই ডাক্তার মনে করেন, র্যাবকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রণের জন্য এর সাথে জড়িত পাচারকারীদের ক্রসফায়ার দিতে হবে। কারণ পাচার বন্ধ করা ছাড়া ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
ইত্তেফাক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন