শনিবার সকালের প্রথম দিকে মধ্যপ্রাচ্য আরেকটি যুদ্ধের প্রান্তে অবস্থান করছিল।
উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র অনুযায়ী, ওই দিন রাতে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা ইরানের একটি ড্রোনকে অনুসরণ করছিল; যেটি সেন্ট্রাল সিরিয়ার তিয়াস বিমান ঘাঁটি থেকে ইরানের অভিজাত ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল।
ড্রোনটি ইসরাইলি আকাশসীমায় প্রবেশের দেড় মিনিটের মধ্যে ইসরাইলি বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার থেকে ড্রোনটির দিকে গুলি ছুড়ে তা গুড়িয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে আটটি ইসরাইলি জঙ্গি বিমান থেকে ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং তিয়াস ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
ইরানের মিত্র সিরিয়ার সামরিক বাহিনী ইসরাইলি জঙ্গি বিমানগুলোকে লক্ষ্য করে ভুমি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে এর জবাব দেয়। সিরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র ইসরাইলের দুটি বিমানকে টারগেট করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে একটি বিমান ক্ষেপনাস্ত্র হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও অন্যটিকে ক্ষেপণাস্ত্রের গোলার আঘাতে ভূপাতিত হয়ে যায়। বিমানের দু’জন ক্রু ইসরাইলি ভূখণ্ডে নিরাপদে অবতরণ করতে পারলেও তাদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত হন।
১৯৮২ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ইসরাইল তার একটি যুদ্ধ বিমান হারায়। এরপর ইসরাইলি বিমানবাহিনী সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর আঘাত হানার মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা সিরিয়ায় চারটি ইরানি যোগাযোগ সুবিধা ধ্বংস করে দেয়।
ইসরাইলি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করার প্রতিক্রিয়া ছিল অনেক বেশি হিংস্র। সিরিয়াতে একটি বিশাল অভিযান পরিচালনার জন্য ইসরাইল একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে। শনিবার ইসরাইলি জেনারেলরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়। ইরান, সিরিয়া ও তাদের লেবাননের মিত্র হিজবুল্লাহ উপলব্ধি করেছিল যে, এ ধরনের কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে এবং এটিকে কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ঘটার অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইসরাইলিরাও তাদের প্রস্তুতির বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু তারা নিবৃত থাকেনি। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হয়েছিল।
যদিও খুব শিগগিরই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে কারা যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিচ্ছে। ইসরাইলি বিমান বাহিনীর বোমাবর্ষণ বিপজ্জনকভাবে রাশিয়ান বাহিনীর অত্যন্ত কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। শনিবার সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অগ্নিমূর্তি ফোন কল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা বাতিলের জন্য যথেষ্ট ছিল।
সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর ইসরাইলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করে রাশিয়া। যদিও এতে ইসরাইলের আকাশসীমায় ইরানি ড্রোন পরিচালনার কোনো উল্লেখ ছিল না।
ইসরাইলের সিনিয়র একজন সামরিক কর্মকর্তা আামকে বলেন, ‘রাশিয়ানরা কেবল গোপনেই নয়, তারা প্রকাশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা ড্রোন চালনা প্রতিরোধ করতে পারত, কিন্তু তারা এর কিছুই করেনি। আমরা রুশ বার্তাটি শুনেছি, যা খুবই জোরালো এবং স্পষ্ট।’
যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছে কিন্তু তা কেবল বর্তমান সময়ের জন্য। মধ্যপ্রাচ্যে একটি হিংসাত্মক অগ্ন্যুত্পাতের জন্য সকল উপাদান যথাস্থানেই রয়ে গেছে।
ছয় বছর আগে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে প্রথম দেশ হিসেবে ইরান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল। এরপর হিজবুল্লাহ বাহিনী এবং ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে শিয়া যোদ্ধারা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এই বাহিনীগুলোর সম্মিলিত সহায়তা নিয়ে মূলত আসাদ সরকার এখনো টিকে আছেন বলে মনে করা হয়।
ইসরাইল ইতোমধ্যে পূর্বাভাস পেয়েছে যে এই বাহিনীগুলোর বন্দুক শেষপর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন