সন্ত্রাসী নিয়োগের জন্য ঝুঁকিতে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মরক্কো। যদিও ২০১১ সালের পর থেকে এখানে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। ওই সময়ে সন্ত্রাসীরা একটি ক্যাফেতে বড় ধরনের বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল।
ইউরোপে আইএসের সন্ত্রাসী হামলার জন্য এখনো জাতিগত মরোক্কানরা সক্রিয় রয়ে গেছে। ২০১৫ সালে প্যারিস হামলায় বেঁচে থাকা একমাত্র অভিযুক্ত মরোক্কোর বংশোদ্ভূত একজন ফরাসি। গত সপ্তাহে তার বিচার শুরু হয়েছে। এই হামলার কয়েক মাস পর ব্রাসেলস এয়ারপোর্টে হামলা এবং ট্রাম বোমা হামলার পিছনেও ছিলেন জাতিগত মরোক্কানরা। বার্সেলোনায় জনতার ভিড়ের মধ্যে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে দেয়া সন্দেহভাজন ড্রাইভারও মরোক্কোয় জন্মগ্রহণ করেন।
মরোক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৬০০ মরক্কোর নাগরিক চরমপন্থী গোষ্ঠী, বিশেষ করে আইএসে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে এখনো অন্তত ৩০০ জন আইএস বাহিনীর সঙ্গে মিলে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এই পরিসংখ্যান তুলনামূলক কম বলে মনে করা হয়। একই সময়ে তিউনিসিয়ায় এই সংখ্যা প্রায় ৭,০০০। এসব দেশের তরুণরা অধিক সংখ্যায় র্যাডিক্যাল ইসলামের দিকে ঝুঁকছে।
সহিংস চরমপন্থা প্রতিরোধের জন্য বিশ্বের অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মৌলবাদকে তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে একত্রিত করতে জার্মানি, ব্রিটেন এবং বেলজিয়ামে কিছু প্রোগ্রামের উন্নয়ন করেছে।
অন্যদিকে, সৌদি আরব নিয়োগপ্রাপ্ত জিহাদিদের জন্য স্ত্রী ও চাকরির খোঁজে মনোনিবেশ করেছে।
এদিকে, মরোক্কোও এ বিষয়ে তার বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন পরীক্ষামূলক উদ্যোগের মাধ্যমে দেশটি দেখানোর চেষ্টা করছে যে কিভাবে একটি নির্দিষ্ট ধরনের ধর্মীয় শিক্ষা চরমপন্থা প্রতিরোধ করতে পারে।
একটি বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেশটি তার নারীদের উপর বিশেষ জোর দিয়েছে। এগারো বছর আগে রাবাতে একটি নতুন এলিট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এটি অল্প বয়সী নারীদেরকে ধর্মীয় পণ্ডিতে পরিণত করে এবং আধ্যাত্মিক নির্দেশনা প্রদানের উদ্দেশ্য তাদেরকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়; যেখানে চরমপন্থীরা হতাশ তরুণদেরকে তাদের চরমপন্থার কাজে নিয়োগ করে থাকে। এসব নারীদের আধ্যাত্মিক নির্দেশনা হিংসাত্মক চরমপন্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্তাগুলোর বিপরীত।
প্রতিটি নারীর স্কুলে ভিজিট করা এবং হোম ভিজিট করাকে ‘মরচিডেট প্রোগ্রাম’ বা আধ্যাত্মিক গাইড নামে পরিচিত। তারা এসব ভিজিটের মাধ্যমে তরুণ মুসলিমদের সঙ্গে কোরআনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সরকার কর্তৃক নিয়োজিত এসব নারীরা মরোক্কোর ইসলামি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। যেখানে আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব সাধারণত পুরুষরাই পালন করে থাকেন। তাই অনেকের কাছেই এটি অস্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে।
রাবাত স্কুলে পুরুষদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, কিন্তু শত শত নারী পণ্ডিতরাই সর্বাধিক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়ে বলে মনে করেন এই কর্মসূচির পরিচালক আবদেস সালাম আল আজার।
আল-আজার বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে আপনাকে বলছি যে, এখানে নারী পণ্ডিতরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে নারীদের ভূমিকার কারণে তাদেরকে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, অন্যান্য নারী, এমনকি পুরুষদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হয়। তারা হচ্ছেন তাদের সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষক। তাই পরামর্শ প্রদান করা তাদের জন্য স্বাভাবিক।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এসব নারীদের শিক্ষা দিচ্ছি যাতে তারা এটি পণ্ডিত্বপূর্ণভাবে অন্যদেরকে শিক্ষা দিতে পারে।’
মরচিডেট প্রোগ্রামটি মৌলবাদ ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একজন নারী তার পরিবারের ও সামাজিক প্রভাবকে তুলে ধরে বলে তিনি জানান।
এই প্রোগ্রামের প্রথম পণ্ডিত হচ্ছেন জিনেব হিড্রা (৪৯)। তিনি আজ থেকে ১১ বছর আগে এটি অর্জন করেন। তারপর থেকে তিনি ইসলামি অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের একজন পূর্ণকালীন কর্মচারী হিসাবে কাজ করছেন।
হিড্রা বলেন, ‘শুরুতেই এটি খুবই কঠিন ছিল। শুরুতে মানুষ আমাদেরকে বিশ্বাস করেনি ... কারণ এর আগে তারা এমন কিছু দেখেনি।’
দ্য আটলান্টিক অবলম্বনে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন