ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেই দেশটির কূটনীতি আবর্তিত হওয়া উচিত। গভীরভাবে আঁকড়ে না ধরলে বাংলাদেশ ফসকে যাবে। চীনের উন্নয়ন খপ্পড়ে পাকিস্তান,নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা গেছে। ভুটান যাই যাই করছে। চীন ভুটানের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে আগ্রাসী চেষ্টা করছে, উন্নয়নের বাতাবরণে ঢোকার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তানেও সামরিক ঘাঁটি করছে চীন। চীনের এমন সম্পর্কের বিপরীতে বাংলাদেশ এখনো ধরা দেয়নি। তাই বাংলাদেশের ওপর এখন ভারত কূটনৈতিক দিক থেকে নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে।
দিল্লির ইনস্টিটিউট অব চাইনিজ স্টাডিজ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বলছে, মালদ্বীপের সঙ্গে চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে। মালদ্বীপে এখনো সফর করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শ্রীলংকার হামবানতোতা বন্দরটি এখন কৌশলগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে চীন। ভারত ও চীনের মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে নেপালে এখন চীনের প্রভাবিত ও ভারত বিরোধি বাম সরকার ক্ষমতায় আসছে শীঘ্রই। পাকিস্তানের গদার বন্দর, কাশ্মীরকে স্পর্শ করে ইকোনমিক করিডর, জিভানিতে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। মিয়ানমারে ২৪’শ কিমি গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণ হচ্ছে চীনা সহায়তায়।
অথচ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলো সার্ককে আরো শক্তিশালী না করে প্রায় মৃতপ্রায় করে রেখেছে। সেই সুযোগ পুরোপুরি নিচ্ছে চীন। এক সময় এই সার্ককে নিয়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নের মত একাট্টা হয়ে অভিন্ন মুদ্রা চালু করতে চেয়েছিল এসব দেশ। সার্কের পরিধি বৃদ্ধি পেতে শুরু করার মধ্যে দিয়ে তা হঠাৎ কর্পুরের মত উবে যায়।
বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যে চীনের প্রভাবের বিপরীতে পাল্টা চাপ দিচ্ছে, ভারতকে সহায়তা করছে। দিল্লি ও বেইজিং’এর মধ্যে ঢাকা অসাধারণ ভারসাম্য বজায় রেখেছে। ভারতের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ যতটা আগ বাড়িয়ে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, ভারত সেভাবে বাংলাদেশের সমস্যায় নজর দেয়নি। তিস্তা চুক্তি, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, মাদক চোরাচালান সহ সীমান্ত সমস্যার বাইরে বাণিজ্য তো রয়েছেই। ৬ মাস হয়ে গেলেও রোহিঙ্গার মত জ্বলজ্বলে সমস্যা সমাধানে ভারতকে আরো কাছে পেতে পারত বাংলাদেশ।
ভারতকে বাংলাদেশের সমস্যায় নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে ড. জনাথন ডিটি ওয়ার্ড বলছেন, চীন-ভারত যুদ্ধ বাঁধলে তা হবে সমুদ্র নিয়ে। ভারতীয় কূটনীতিক চন্দ্রশেখর দাসগুপ্ত বলেছেন, বাংলাদেশ সফরের সময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২৬ বিলিয়ন ডলারের চেক স্বাক্ষর করলেও ঢাকা দেশটির তালুবদ্ধ হয়নি। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের ওপর আস্থা রেখেছে। অথচ ভারত রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের পাশেই বেশি থেকেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন