মার্কিন সরকার আগামী মে মাসে তেল আবিব থেকে জেরুসালেম শহরে নিজের দূতাবাস স্থানান্তরের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের হামাস ও পিএলও।
হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানু শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্কিন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে গোটা অঞ্চল ইসরাইলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
তিনি আরো বলেন, মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করা হলেও বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন ঘটবে না অর্থাৎ জেরুসালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবেই থেকে যাবে; ইসরাইলের রাজধানী হতে পারবে না।
হামাসের মুখপাত্র তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘটনাকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন।
এদিকে ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা- পিএলও’র নির্বাহী কমিটির সচিব সায়েব এরিকাত মার্কিন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর অনুভূতিতে প্রচণ্ড আঘাত হানবে। তিনি বলেন, জেরুসালেম ফিলিস্তিনি জনগণের সম্পদ এবং এটি হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী; ইসরাইলের নয়।
মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বের কঠোর বিরোধিতা উপেক্ষা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ঘোষণা করেছে, আগামী মে মাসে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেম শহরে স্থানান্তর করা হবে।
গত ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর তিনি ঘোষণা করেন, তেল আবিব থেকে জেরুসালেম শহরে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়া হবে। ট্রাম্পের এ ঘোষণার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে এ নিয়ে ভোটাভুটি হয় এবং আমেরিকা তাতে ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়।
জেরুসালেম ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থন চান আব্বাস
ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুসালেমকে ওয়াশিংটন স্বীকৃতি দেয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গতকাল সোমবার মস্কো সফরে গেছেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সফরের দুই সপ্তাহ পর ফিলিস্তিনি এ নেতা মস্কো সফরে গেলেন।
এ সফরে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল কথিত শান্তি আলোচনায় মার্কিন আধিপত্য নস্যাৎ করতে তিনি রাশিয়ার পক্ষ থেকে বৃহত্তর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাবেন।
ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছেন, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র পক্ষপাতপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। তবে ভবিষ্যৎ আলোচনায় এর অবসান হতে হবে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা আরো বলছেন, ইসরাইলের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কথিত শান্তি আলোচনায় প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস রাশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশকে যুক্ত করতে চান। মার্কিন সরকারের ইসরাইলপন্থী অবস্থানের কারণে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
মাহমুদ আব্বাসের কূটনৈতিক উপদেষ্টা মাজদি আল-খালিদি বলেছেন, আন্তর্জাতিক শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে রাশিয়া ও পুতিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এর আগে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর গত শনিবার বলেছেন, তারা ভবিষ্যতে কথিত শান্তি আলোচনায় চীন ও আরব লিগকে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। আমেরিকার কর্তৃত্বকামী আচরণের কারণে তারা এমনটি চিন্তা করছেন বলে জানান রিয়াদ মানসুর।
গত ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনের জেরুসালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর পর থেকে ফিলিস্তিনিরা ব্যাপকমাত্রায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তখন বলেছিলেন, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন-ইসরাইল আলোচনায় আমেরিকাকে আর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মানবেন না তিনি।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে আব্বাসের ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে তিনি কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এএফপি ও আলজাজিরা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন