হঠাৎ করেই উড়োজাহাজটি একটি শূন্য মাঠের ভেতর দিয়ে ছুটতে শুরু করে। এরপর রানওয়ের পাশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। একইসঙ্গে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকে। এ সময় চূর্ণবিচূর্ণ বিমানটির কাছে দৌড়ে যান উদ্ধারকারীরা। তখন নেপালি আরোহীরা ‘আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও আমাকে’ বলে চিৎকার করছিলেন। আর বাংলাদেশি আরোহীরা ইংরেজিতে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘হেল্প মি, প্লিজ হেল্প মি।’ ১২ মার্চ ২০১৮ সোমবার নেপালে বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটির যাত্রীরা এভাবেই নিজেদের জীবন বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছিলেন উদ্ধারকর্মীদের কাছে।
বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষদুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির আরোহীদের উদ্ধারে দ্রুত উড়োজাহাজটির দিকে ছুটে যান নেপালের সেনাসদস্য বালকৃষ্ণ উপাধ্যায়। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়া ও এর ঠিক পরবর্তী মুহুর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর কাছে এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। ওই বিধ্বস্তের ঘটনাকে ভয়ঙ্কর বলেও মন্তব্য করেন নেপালের এই সেনাসদস্য।
এর পরের মুহূর্তের বর্ণনা পাওয়া যায় নেপালি সাংবাদিক ভদ্র শর্মার কাছ থেকে। তিনি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে বলেন, ‘উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে ছিলাম আমি। অভিবাসন নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজে সেখানে ছিলাম। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তড়িগড়ি করে বিমানবন্দরে ছুটে যাই। বিমানবন্দরে গেটে পৌঁছে নুড়ি পাথরের একটা স্তুপে দাঁড়িয়ে দেখি, বিধ্বস্ত বিমানের ইঞ্জিন থেকে আগুন বেরুচ্ছে। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি ছিটানো হচ্ছে।’
ভদ্রা শর্মা আরও বলেন, ‘একজন অগ্নিনির্বাপক আমাদের (সঙ্গে থাকা কয়েকজন নেপালি ফটো সাংবাদিক ছিলেন) তার পিকআপ ট্রাকের পেছনে উঠতে বলেন। এরপর আমরা ঠিক ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছাই। ওই সময় আমার নাকে প্লাস্টিক পোড়ার গন্ধ এসে লাগছিল। খুবই বিষাক্ত গন্ধ।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলের চারপাশে তাকিয়ে দেখি, ঘাঁস থেঁতলে কালো হয়ে গেছে। এখানে সেখানে ছেঁড়া কাগজ, সিটের ছিন্নভিন্ন টুকরো, পানির বোতল ইত্যাদি পড়ে রয়েছে। বিধ্বস্ত বিমানটির দিকে তাকিয়ে দেখি, এটি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। বেশিরভাগ অংশই পুড়ে গেছে। তবে এর লেজ তখনও অক্ষত ছিল, লেজ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।’
বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ
তিনি বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া ঘাসে সারিবদ্ধভাবে কিছু হলুদ রঙের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখলাম। হতাহতদের উদ্ধারে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।’
বিমানবন্দরের একটি জ্বালানি কোম্পানিতে কাজ করেন কৈলাশ অধিকারী। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তার ভাষায়, ‘পর পর দুই বার বিকট শব্দ হয়। শব্দের উৎসের খোঁজে এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারি, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর অগ্নিনির্বাপকরা ঘটনাস্থলে আসেন। যদি তারা আরও আগে আসতে পারতো, তবে আরও বেশি মানুষকে বাঁচানো যেতো।’
উড়োজাহাজে থাকা বসন্ত বোহোরা নামের একজন নেপালি যাত্রী বলেন, ‘হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি শুরু হয়। এর পরপরই বিকট শব্দ। জানালার পাশেই ছিল আমার আসন। কাচ ভেঙে আমি বেরিয়ে আসি।’
মাথা আর পায়ে আঘাত লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য যে, এমন ঘটনার পরও আমি বেঁচে আছি। উড়োজাহাজটি থেকে বেরিয়ে আসার পর তো আমি কিছু মনে করতে পারছিলাম না। কেউ একজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমার বন্ধুরা অন্য এক হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিধ্বস্তের এ ঘটনায় ৫০ জন মারা গেছেন। উড়োজাহাজটিতে মোট ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু। সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, অটোয়া সান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন