সাত বছর পূর্ণ হয়ে অষ্টম বছরে পড়েছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। সাত বছরের জটিল এ যুদ্ধে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার বেসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গৃহহীন হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক।
এক প্রকার ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো দেশ। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সরকারের নির্মম দমন-নিপীড়ন থেকে শুরু করে দেশটিতে বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপ পর্যন্ত বহু মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এ যুদ্ধ।
স্বৈরশাসন থেকে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে সমগ্র আরব ভূখণ্ডে শুরু হয় ‘আরব বসন্ত’। প্রথমে তিউনিশিয়ায় বেন আলী সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হলেও আরব বসন্তের সেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি।
ওই বছরই ১৫ মার্চ সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে দেশটির মুক্তিকামী তরুণরা। আন্দোলনের পেছনে সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নিন্দা জানিয়ে রাজধানী দামেস্ক ও দক্ষিণের শহর দারায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদকে কঠোর হাতে দমন করার চেষ্টা করে সরকার। তবে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে।
জুলাইয়ে আসাদের সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করা সেনা কর্মকর্তা কর্নেল রিয়াদ আল আসাদ গঠন করেন তুরস্কভিত্তিক বিদ্রোহী ফ্রি-সিরিয়ান আর্মি (এফএসএ)। কয়েক মাসের মধ্যে আলেপ্পো ও হোমসসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর নিয়ন্ত্রণে নেয় এই বিদ্রোহীরা।
কয়েক মাসের চেষ্টায় ২০১২ সালের মার্চে শহরগুলো পুনর্দখল করে সরকারি বাহিনী। জুলাইয়ে রাজধানী দামেস্ক দখলের লড়াই শুরু করে বিদ্রোহীরা। কিন্তু এতে ব্যর্থ হয় তারা। ২০১৩ থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অন্য এলাকাগুলোতে বিমান হামলা শুরু করে সরকারি বাহিনী। এর এক বছর পরই সিরিয়া ও ইরাকে উত্থান ঘটে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের। দেশ দুটির বিশাল একটি অঞ্চল দখলে নিয়ে ঘোষণা করে আলাদা রাষ্ট্র।
২০১৫ সাল নাগাদ সিরিয়া সরকারকে প্রায় উৎখাত করে ফেলেছিল বিদ্রোহীরা। কিন্তু হঠাৎই ওই বছর বাশারের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয় রাশিয়া। এই প্রথম সিরিয়া যুদ্ধে বিদেশি হস্তক্ষেপ শুরু হয়। প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়। আসাদকে সমর্থন দিতে শুরু করে শিয়াপ্রধান রাষ্ট্র ইরান, ইরাক ও লেবাননের হেজবুল্লাহ। বিপরীত দিকে তুরস্ক, কাতার ও সৌদি আরব সমর্থন দেয় বিদ্রোহীদের। সিরিয়া কার্যত পরিণত হয় একটি প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে।
বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে সিরিয়ায় ঘাঁটি গাড়ে আইএস। ২০১৬ সালে আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। এছাড়া কুর্দি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনটির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। আসাদবিরোধীদের অস্ত্র দিতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৪ সাল থেকে আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বোমা হামলা শুরু করে আন্তর্জাতিক জোট। পরে হেজবুল্লাহ ও আসাদের পক্ষের যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা শুরু করে ইসরাইল। চলতি বছরের ফেব্র“য়ারিতে একটি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এ সময়ের মধ্যে হয়েছে নানা সমঝোতা চেষ্টা। কিন্তু কিছুই কাজে আসেনি। ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের উদ্যোগও। বর্তমানে ভেঙে পড়েছে পুরো সিরিয়া। সংঘাতের শিগগিরই কোনো সমাধান হবে- এমন আশাও করা যাচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন