বুধবার ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ধীমান বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। দীর্ঘ রোগভোগেও কখনো থেমে থাকেনি তার সৃষ্টিশীল কর্ম, কখনো ম্লান হয়নি রসবোধ। সর্বপোরি তিনি কখনো তার ঔচিত্যবোধ বিসর্জন দেননি।মানুষ স্টিফেন হকিংয়ের যুগান্তকারী তত্ত্বের জন্য যেমন তাকে মনে রাখবে, একইভাবে ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি।স্টিফেন হকিং ২০১৩ সালে ইসরাইলে বিশাল পরিসরে আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তার বক্তৃতা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি তা বয়কট করে সংবাদ শিরোনামে আসেন।তিনি তখন যুক্তরাজ্যের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। ইসরাইলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ জেরুজালেমে দ্য প্রেসিডেনশিয়াল কনফারেন্স নামে সম্মেলনটির আয়োজন করেন।
একটি চিঠির মাধ্যমে স্টিফেন হকিং আয়োজকদের বলেন, ‘ইসরাইলের বর্তমান সরকারের নীতি বিপর্যয় ডেকে আনবে।’চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু শান্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমার মতামত দেয়ার উদ্দেশ্যেই প্রেসিডেনশিয়াল কনফারেন্সের আমন্ত্রণ গ্রহণ করিনি, পশ্চিম তীরের উপর বক্তৃতা দিতে পারব এটাও একটা কারণ ছিল।’‘কিন্তু, আমি ফিলিস্তিনের বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদের ইমেইল পেয়েছি। তাদের সবাই বলছেন, আমার উচিত বয়কটকে সমর্থন করা। এই প্রেক্ষিতে আমি ঠিক করেছি, অবশ্যই ওই সম্মেলন যোগদানে বিরত থাকব’ যোগ করেন সময়ের এই সেরা বিজ্ঞানী।
ফিলিস্তিনের আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষাবিদরা সম্মেলন বয়কট করার জন্য স্টিফেন হকিংয়ের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন।বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট ও স্যাঙ্কশন মুভমেন্ট (বিডিএস) বা বর্জন, অসহযোগ ও নিষেধাজ্ঞা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ওমার বারঘুতি বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে ইসরাইলকে বয়কটে হকিং সমর্থন দেয়ায় ফিলিস্তিনিরা কৃতজ্ঞ। আমরা মনে করি এর ফলে, বর্ণবাদের জন্য শিক্ষাবিদরা যেমন দক্ষিণ আফ্রিকাকে বয়কট করেছিল, তেমনটাই আমদের জন্যও তারা করা শুরু করবেন।’
ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক আলি আবুনিমাহ বলেন, ‘এখন পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় স্টিফেন হকিংয়ের ওই সিদ্ধান্ত একটা টার্নিং পয়েন্ট/বাঁক বদল ছিল। এর ফলেই ইসরাইলকে বয়কট করার আন্দোলন মূলধারায় স্বীকৃতি পায়।’শুধু ইসরাইলকে বয়কট নয়, অন্য উপায়েও হকিং ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করেছেন।গত বছর তিনি ফেসবুকে তার কয়েক লক্ষ ভক্তের কাছে ফিলিস্তিনের পদার্থবিজ্ঞান পড়ানোর জন্য অ্যাডভান্সড ফিজিক্স স্কুল তৈরিতে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানান।
তিনি লেখেন, ‘আমি সব জায়গার বিজ্ঞানীদের আন্দোলন, প্রকাশনা এবং সহযোগিতার অধিকার সমর্থন করি।’২০১৬ সালে ফিলিস্তিনের শিক্ষিকা হানান আল-হারুব গ্লোবাল টিচার প্রাইজ পেলে হকিং একটি ফেসবুক ভিডিওতে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনি পৃথিবীর সব জায়গার মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা।’‘বিভেদে পর্যুদস্ত যে সমাজে শিশুরা ক্রমাগত নৃশংসতার স্বীকার হয়, সেখানে হানান আল হারুব তার শ্রেণি কক্ষ থেকে মানসিক আঘাতে জর্জরিত শিশুদের মধ্যে বিশ্বাস জাগিয়ে তুলছেন এবং তাদেরকে সাহায্য করছেন’ যোগ করেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন