আমাদের মধ্যে কমবেশি সকলেরই স্বপ্ন থাকে উন্নত কোনো দেশ থেকে নিজের গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্টগ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে বিদেশে উচ্চশিক্ষার এই স্বপ্ন অধরা থেকে যায়।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা শুনলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায়, সেটি হলো কোন দেশে সাধ্যের ভেতর উচ্চশিক্ষা লাভ করা সম্ভব? তাই যে দেশগুলোতে কম খরচেই উচ্চশিক্ষা লাভ করা যায়, তা তুলে ধরা হলো।
১. নরওয়ে
যদিও প্রায় সমস্ত নর্ডিক দেশগুলোতে স্বল্প খরচে উচ্চশিক্ষা লাভ করা যায়, কিন্তু এর মধ্যে নরওয়ে সবচেয়ে এগিয়ে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা এর বাইরের সকল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সকল প্রোগ্রামেই এই দেশটির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ দিয়ে থাকে। বিদেশের কোনো দেশে পড়াশোনা করার সময় ভাষা অনেক বড় একটি বিষয়। নরওয়ের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই ইংরেজিতে তাদের পাঠদান করে থাকে এবং এ দেশের মানুষও ইংরেজিতে পারদর্শী। এছাড়া নরওয়ের উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে অনেকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কিন্তু নরওয়েতে থাকা খাওয়ার খরচটা একটু বেশি। এখানে থাকতে হলে বছরে প্রায় ১৪ হাজার ৫১০ মার্কিন ডলার গুনতে হবে আপনাকে।
২. জার্মানি
নরওয়ের পরেই আসে ‘ল্যান্ড অফ আইডিয়া’ নামে খ্যাত জার্মানি। এই দেশটিতে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। কারণ হিসাবে ধরা হয়, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্বল্প ব্যয়ে অধ্যায়নের সুযোগ। আরও একটি কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কলারশিপের সুবিধা। জার্মান সরকার তাদের বাজেটের একটি বিরাট অংশ ব্যয় করে থাকে শিক্ষার পেছনে। তাই এখানে তুলনামূলক কম খরচে অনেক ভালো মানের শিক্ষা লাভ করা যায়। এখানে থাকা খাওয়ার জন্য বছরে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার ৪৮০ মার্কিন ডলার খরচ হয়।
৩. ফ্রান্স
ফ্রান্সের একটা মজার দিক হচ্ছে- এখানে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা একই খরচে লেখাপড়া করতে পারে। এখানে পড়াশোনার খরচটা অবিশ্বাস্যভাবে কম। ২০১৫-১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী ফ্রান্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে প্রতিবছর প্রায় ২০০ ইউএস ডলার, মাস্টার্সের জন্য ২৫৬ ইউএস ডলার এবং ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য ৪২৫ ইউএস ডলার ব্যয় হয়ে থাকে। তবে প্যারিসে পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ অন্যান্য শহরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি।
৪. পোল্যান্ড
এর পরেই যে দেশটির নাম আসে সেটি হলো পোল্যান্ড। আপনি যদি পোলিশ ভাষায় পারদর্শী হন এবং পোলিশ ভাষায় আপনার কোর্সগুলিতে এনরোল করেন, তাহলে অন্য সকল পোলিশ শিক্ষার্থীর মতো আপনি ও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অধ্যায়ন করতে পারবেন। ইংরেজিতেও আপনার ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ আছে এই দেশটিতে। সেক্ষেত্রে আপনার প্রতি বছরে প্রায় ২ হাজার ১৮৫ থেকে ৩ হাজার ২৮০ ইউএস ডলার ব্যয় হবে। তা ছাড়া এদেশের সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি আপনাকে সব সময় আকর্ষণ করবে।
৫. মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া সন্দেহাতীতভাবে স্বল্প খরচে থাকা ও পড়াশোনার জন্য অন্যতম একটি জায়গা। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর কিউএস বেস্ট স্টুডেন্ট সিটিজ ২০১৬ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী শহরের মর্যাদা লাভ করেছে। স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার জন্য প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার ৮৬০ থেকে ৪ হাজার ২৯০ ইউএস ডলার খরচ হয়। আর প্রতিবছর আপনাকে প্রায় ৪ হাজার ৫০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে টিউশন ফির জন্য।
৬. তাইওয়ান
অবাক হলেন? অবাক হলেও এটাই সত্য যে তাইওয়ান বিদেশে কম খরচে পড়াশোনা করার জন্য অন্যতম একটি দেশ। ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি-২০০৬ তালিকায় ৬৮তম স্থান অধিকার করে। দেশটিতে লিবারেল আর্টসের যেকোনো বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করতে গড়ে ৩ হাজার ১৮০ থেকে ৩ হাজার ৯০০ ইউএস ডলার লাগে। তা ছাড়া জীবনযাত্রার খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। প্রতিবছর আবাসনের পেছনে গড়ে ২ হাজার ৩৩০ ইউএস ডলার ব্যয় হয় এই দেশটিতে।প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন