মিশরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। তিনদিন ধরে ভোট গ্রহণের পর বুধবার রাত থেকে নির্বাচন কমিশন এই গণনা শুরু করেন।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে এ পর্যন্ত এগিয়ে আছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি।
২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় এ ভোটগ্রহণ, চলে বুধবার পর্যন্ত।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি’র প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্যপন্থী রাজনীতিবিদ মুসা মোস্তফা তেমন জনপ্রিয় না হওয়ায় ফলাফল এরই মধ্যে বোঝা হয়ে গেছে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, এবারের নির্বাচনে আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসবেন বলে মনে করছেন দেশটির অধিকাংশ মানুষ।
সোমবার সকাল থেকে তিন দিনব্যাপী এই ভোট শুরু হয়। দেশটির বিরোধী দলগুলো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করায় প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আর কেউ নেই। মিশরীয় সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান সামি আনান প্রথমে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করেন। তাকে বর্তমান প্রেসিডেন্টের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছিল।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসা মোস্তফা মুসা আগে থেকেই ফাত্তাহ আল সিসি’র প্রিয়পাত্র হিসেবে পরিচিত। সরকারের সমর্থক হিসেবেও এর আগে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া সিসির পুনরায় নির্বাচনের প্রতিও তার সমর্থন ছিল।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ভয়-আতঙ্ক-ত্রাস সৃষ্টি করে মিশরে রাজত্ব করছেন প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। চালু করেছেন ধর-পাকড়ের নীতি। গণতন্ত্রের লাগাম ধরে স্বৈরশাসন চালাচ্ছেন। দমন-পীড়নের মাধ্যমে ভয়ের রাজ্য কায়েম রেখেছেন। সাংবাদিক, সরকারি কর্মচারী, এনজিও কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছেলে-বুড়ো- সবার মনেই ‘সিসি ভয়’। চুন থেকে পান খসলেই বিপদ।
তার বিরুদ্ধে কৌতুক করে কথা বলতেও সাহস পান না কেউই। বিরোধী বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে কারাগারকে ব্যবহার করছেন তিনি। লেলিয়ে দিচ্ছেন সেনা-পুলিশের পেটুয়া বাহিনী। বিচার বিভাগকেও চোখের ইশারায় ব্যবহার করছেন সিসি।
তার শাসনামলে গত ৫ বছরে ১০ হাজারেরও বেশি রাজনীতিককে গ্রেপ্তার করেছেন। সিসির বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইলেও একজনকে কারাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করে সবাইকে আতঙ্কে রেখে একা গোল দিচ্ছেন সেনাপ্রধান থেকে এক রাতে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া এ স্বৈরশাসক।
গত পাঁচ বছরে মিশরে বিনিয়োগ ও পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। জ্বালানির ওপর ভর্তুকি কর্তন ও করারোপের কারণে বাজেটে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতিও ক্ষেপিয়ে তুলেছে ব্যবসায়ীদের।
২০১১ সালে অভ্যুত্থানের আগের সময়ের মতোই বিদেশি রিজার্ভ নিম্নস্তরে। গত বছর দেশটির পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ লাখ, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ কম। কমে গেছে হোটেল-আবাসন ব্যবসা। তলানিতে নেমেছে বিদেশি বিনিয়োগ। এরপরও জনগণের মধ্যে টু শব্দটিও নেই। মুখ বুজে সহ্য করছেন নাগরিকরা। কেউ একটু এগিয়ে এলেই ঠাসা হচ্ছে কারাগারে।
দ্য ইকোনোমিস্ট জানায়, এতকিছুর পরও এবারের নির্বাচনে সিসির জয় নিশ্চিত। জনগণ নয়, সিসির সামনে এখন একটাই চ্যালেঞ্জ। সেনাবাহিনী ও শিল্পপতিরা তার নীতির বিরুদ্ধে ক্ষেপে গেলে সিসির হাত থেকে মুক্ত হবে মিশরের মসনদ। তবে চার বছর মেয়াদের দ্বিতীয় দফার বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার নিয়ম নেই সংবিধানে।
অনেক এমপি এ ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আবার অনেকে বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদের পর আর ক্ষমতায় থাকবেন না সিসি। এ বিষয়ে প্রাইভেট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আপনি আম খেতে ভালোবাসলেও, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন আম খেতে কিন্তু আপনার ভালো লাগবে না।
মিশরের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ। আরব দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনসংখ্যার এ দেশটির মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন