আসানসোলের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক ঘৃণার মারণাস্ত্রে খুন হওয়া ১৬ বছরের কিশোর পুত্রের শেষকৃত্যে প্রতিশোধের বিপরীতে মাওলানা রশিদি আহ্বান জানিয়েছেন জীবনের। বলেছেন, ‘কোনও প্রতিহিংসা নয়। প্রতিশোধ নিতে যদি কারোর মৃত্যু ঘটাও, তাহলে আমি এই শহর ছেড়ে চলে যাব। আমি তোমাদের সঙ্গে ৩০ বছর ধরে আছি, আমাকে যদি তোমরা ভালোবাসো তাহলে আর কাউকে যেন এভাবে মরতে না হয়।’ মওলানার এই তৎপরতায় আপাতভাবে শান্ত হয় আসানসোল। গত রবিবারও মওলানা রশিদি বলেছেন, আমার বিশ্বাস আমাকে শান্তির শিক্ষা দেয় তাই আমিও সবাইকে শান্তি বজায় রাখার কথা বলি। আমার পরিবার বিপুল ভুগেছে তবে আমি চাই না কেউ সহিংসতা ছড়াতে এটাকে অজুহাত বানাক।
মওলানার এসব তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ এলাকার এক বাসিন্দা ওয়াসিম রাজা বলেন, ইমাম সাবের চরম ক্ষতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও যদি তিনি ধৈর্য্য ধরে সবাইকে আইন হাতে না তোলার জন্য বলেছেন, আমরা তার পদচিহ্ন অনুরণ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অল্প যে কয়েক ঘর হিন্দু যারা এখানে রয়ে গেছেন তাদের বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই আমরা। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি এসব এলাকা যেন খালি করে ফেলবার চেষ্টা না হয়। বৃহত্তর পরিসরে সমাজে যেন কোনও ভুল বার্তা না যায় সেকারনে এই এলাকার তরুণেরা একমাত্র স্থানীয় মন্দিরটিরও যেন কোনও ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করছে।
শীতলডাঙ্গার শিব মন্দির আগলে রেখেছেন মুসলিমরা
শীতলডাঙ্গার শিব মন্দির আগলে রেখেছেন মুসলিমরা
নিজের ভাঙচুর হওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এক নারী বলেছেন, পাল্টাপাল্টি শোধ-প্রতিশোধ নেওয়া চলতে থাকুক তা চাই না। যুগ যুগ ধরে এখানে হিন্দু মুসলমান শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে আর তা বজায়ও থাকবে। সহিংসতা আমাদের মতো গরিবদের কোনও উপকারে আসে না। আমার ছেলে আহত হয়েছে তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আমার বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে তবুও সবকিছু ভুলে যেতে চাই। প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি যেন শান্তি নিশ্চিত করা হয়।
একই অনুভূতি রতন মালা দেবীরও। ৬৬ বছর বয়সী এই গত ২৮ মার্চের ঘটনার বর্ণনা দেন। নারী বলেন, সেদিন বোমা ও পাথর ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে যেন তাণ্ডব শুরু করেছিল মানুষ। আমরা সবসময় এখানে যেরকম ছিলাম সেরকম শান্তির সঙ্গে বসবাস করতে চাই। যাতে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ভয় ছাড়াই ঘরের বাইরে বের হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের রবিবার হিন্দু দেবতা রামের জন্ম বার্ষিকী উদযাপনের রাম নবমীর র্যালি থেকে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে পাঁচজন নিহত হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বহু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। সহিংসতার জের ধরে রাজ্য দুটিতে সাম্প্রদাযিক উত্তেজনা চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন