সিরিয়ায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসন সম্পর্কে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে একটি শব্দও উচ্চারণ করা হয়নি।
সম্মেলনের একজন মুখপাত্র এমন তথ্যই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আরব নেতারা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও হোমস প্রদেশের কয়েকটি স্থানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি।
রবিবার সৌদি আরবে এ শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এর একদিন আগে সিরিয়ার পূর্ব গৌতায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ শহর দৌমায় রাসায়নিক হামলার জন্য বাশার আল আসাদের বাহিনীকে দায়ী করে দেশটির সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন স্থাপনায় একযোগে আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।
এ সম্মেলনে সিরিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। কারণ ২০১১ সালে আরব লীগ থেকে সিরিয়াকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন.....
বিধ্বংসী হামলার পর কেমন আছেন সিরিয়াবাসী
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে এ হামলায় সিরিয়ার নাগরিকদের ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।
হামলার পর পরই সিরিয়ার নাগরিকরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের হাতে ছিল সিরিয়ার পতাকা আর প্রেসিডেন্ট আসাদের ছবি।
গাড়িতে চেপে পতাকা নাড়াতে নাড়াতে যেতে দেখা গেছে অনেককে।
দামেস্কের তরুণ-তরুণীদের ঘর থেকে বের হয়ে দুই হাত উঠিয়ে বিজয় চিহ্ন দেখাতে দেখা গেছে।
শনিবার সকালে দামেস্কের রাস্তা অন্যান্য দিনের মতোই ব্যস্ত ছিল।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশিচৌকিগুলো অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে ছিল। অন্যান্য দিনের মতো কড়াকড়ি ছিল না।
দোকানপাট যথারীতি খুলেছে এবং মানুষজন তাদের কাজে গেছে। দামেস্ক শহরের কেন্দ্রস্থলে সিরিয়ান টেলিভিশন ভবনের সামনে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়েছে।
তারা সিরিয়া, সেনাবাহিনী ও প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে স্লোগান দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভয়ে তারা ভীত নন এবং কোনো অবস্থাতেই সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও বাশার আল আসাদের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাখ্যান করবেন না।
হামলার পর সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে টুইটারে পোস্ট করা ছয় সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ হাতে একটি ব্রিফকেস নিয়ে মার্বেলের তৈরি মেঝের ওপর দিয়ে হেঁটে বড় একটি ঘরে প্রবেশ করেছেন।
সেটিকে প্রেসিডেন্টের অফিস হিসাবে দাবি করা হচ্ছে। সেই সময় আসাদ কালো স্যুট পরিহিত ছিলেন।
তবে সে ভিডিওতে প্রেসিডেন্ট আসাদের চেহারা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না।
প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে বলা হচ্ছে, হামলার পর সকালে প্রেসিডেন্ট আসাদ তার অফিসে এসেছিলেন এবং এ ভিডিওটি সে সময় ধারণ করা হয়েছে।
তবে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিরাশ সিরিয়ান বিদ্রোহীরা।
সিরিয়ার আসাদবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আশা করেছিল, এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিদ্রোহী নেতা মুহাম্মদ আলাউশ এ পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ।
তিনি বলেন, মিসাইলগুলো অপরাধের সরঞ্জামের ওপরে আঘাত হেনেছে- কিন্তু পেছনে থাকা অপরাধীকে নয়।
এদিকে সিরিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছেন, সরকার ও নাগরিকরা সন্ত্রাসবাদের উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর।
মার্কিন জোটের হামলার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে ফোনালাপে বাশার আল আসাদ এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে এ হামলা চালিয়েছে।
ফোনালাপে হাসান রুহানি সিরিয়ার প্রতি আবারও ইরানের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
রুহানি বলেন, মৃত্যু ও ধ্বংস ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন হামলার অন্য কোনো ফল বয়ে আনবে না। এ হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের উপস্থিতির স্বপক্ষে যুক্তি তৈরি করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।
সিরীয় প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে এক টুইটবার্তায় জানানো হয়েছে, মার্কিন জোটের হামলার পর দেশের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে সন্ত্রাসবাদকে ধ্বংস করতে সিরিয়ার নাগরিকদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন