অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্ববিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত তারিক রামাদান কারাগারে নানা রোগে কাবু হয়ে পড়েছেন।
আদালত জামিনে মুক্তি দিতে অস্বীকার করায় তাকে গরাদের ভেতরে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে।
ফ্রান্সে দুই নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তারিক রামাদান আটক করা হয়। এর পর আরও এক নারী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্যজনিত কারণে তার মুক্তির দাবি জানালেও ফরাসি আদালত তা নাকচ করে দিয়েছেন।
কারা চিকিৎসকরা বলছেন, তার চিকিৎসা কারাগারেই সম্ভব।
তবে রামাদানের আইনজীবী বলেন, তিনি বিভিন্ন ধরনের কাঠিন্যতায় (এমএস) ও স্নায়ুজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কারাগারের ভেতরে যার চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। কাজেই তাকে মুক্তি দেয়া দরকার।
সূত্র জানায়, চিকিৎসকরা এ বিষয়ে একমত যে তিনি ২০০৬ সাল থেকে এমএসে ভুগছেন। কিন্তু বিচারকরা বলছেন, তিনি যদি গরাদের ভেতরেও থাকেন, তা হলে তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পাবেন এবং তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
ইউরোপীয় মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ রামাদান তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে অস্বীকার করে আসছেন।
তার লাখ লাখ ভক্ত তাকে গ্রেফতারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকের অভিযোগ, কেবল মুসলিম হওয়ায় তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।
তারিক রামাদানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ফ্রান্সের লিয়েনের হোটেলে এক দুপুরে একজন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু লন্ডন থেকে রামাদানকে বহনকারী বিমান ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটের আগে লিয়নে পৌঁছায়নি।
এ বিষয়ে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছিলেন রামাদান। কিন্তু সেই নথি মামলার ফাইল থেকে হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফরাসি পুলিশ।
এর পর রামাদান নিজে ফরাসি পুলিশের কাছে মামলার বিষয়ে সহযোগিতা করে আসছিলেন। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা যথাযথভাবে তদন্ত না করেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ফরাসি আইন লঙ্ঘন করে তাকে নির্জন কারাবাস দেয়া হয়েছে। সেখানে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর রামাদানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তা সত্ত্বেও তাকে জামিন দেয়া হয়নি।
সামগ্রিক পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালীন ইসলাম শিক্ষা বিভাগের এ অধ্যাপক তার মুসলিম পরিচয়ের কারণে ফরাসি কর্তৃপক্ষের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন কিনা।
ইন্টারন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর এ জাস্ট ওয়ার্ল্ডের প্রেসিডেন্ট ড. চন্দ্র মুজাফফর এক লেখায় অভিযোগ করেছেন, অধ্যাপক তারিক রামাদান ফ্রান্সে প্রহসনের বিচারের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, তারিক রামাদান ২ ফেব্রুয়ারি থেকে প্যারিসের ফ্লুরি-মেরোগিস কারাগারের অতিরিক্ত নিরাপত্তাসংবলিত একটি শাখার নির্জন কক্ষে আটক আছেন।
আটক রামাদানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ফোনেও তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন