'যখন আমি ছোটো ছিলাম। আমার বাবা-মা বলতেন, আমি একদিন জয়ী হবোই। আমিও সেটা বিশ্বাস করতাম। জীবনে অনেক বড়ো হবো বলে মনে মনে ভাবতাম। প্রথম ছয় বছর বেশ ভালোভাবেই বাবা-মার সেই কথাগুলো উপভোগ করলাম। তার পর ভর্তি হলাম স্কুলে।
সেই সময়ই সব পরিবর্তন হয়ে যেতে লাগলো। স্কুল আমার কাছে বিরক্তিকর মনে হতে লাগলো। যে আমি সব সময় কথা বলতাম, স্কুলে যাওয়ার পর যেনো আমার মুখটা বন্ধ হয়ে গেল।
সাধারণত পেছনের সারিতে বসতাম আমি। কথা পারতপক্ষে না বলার চেষ্টা করতাম। একদিন আমার বাবা স্কুলে আসলেন। আমার শিক্ষক বাবাকে ডেকে বললেন, আপনার ছেলে তো বেশ স্মার্ট। তারপর আমাকে পরের ক্লাসে তুলে দিলেন তিনি। অথচ সেবার আমি ফেল করবো বলে ধরেই নিয়েছিলাম।
এই ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। একপর্যায়ে পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করি। অবশ্য আমি ভালো ছাত্র হতে চেয়েছিলাম, তবে সেটা হয়ে ওঠা হয়নি। সিস্টেম সেটা হতে দেয়নি। সিস্টেম যে মানদণ্ডের ভিত্তিতে কাউকে ভালো হিসেবে বিবেচনা করে, আমি সেই ছাত্র হতে পারিনি।
আমি সবসময়ই ক্রীড়াবিদ হতে চেয়েছি। কিন্তু টাকার পেছনেও আমাকে ছুটতে হয়েছে। বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছি। প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। বেশিরভাগ সময় আমার হোমওয়ার্ক করে দিয়েছে বান্ধবীরা।
আমি কেবল আমার নামটা লেখতাম। অন্য লেখাগুলো অন্যরা লিখে দিতো। স্কুল এবং ইউনিভার্সিটিতে কখনো একটা বাক্যও পুরোপুরি নিজের থেকে লেখিনি। কখনো কারো দেখে লেখেছি না হয় কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছি।
অথচ আমাকে ক্রীড়াবিদ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে গল্পটা ভিন্ন হতে পারতো। একবার তো এক শিক্ষকের চেম্বারে মধ্যরাতে ঢুকে পড়েছিলাম। হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলাম ছুরি।
পরে দেখি পরীক্ষার জন্য চার সেট প্রশ্ন তৈরি করা অাছে। কোন সেট আসবে পরীক্ষায় সেটা বুঝতে না পেরে পরদিন চার সেটই নকল করি। আমার এক জুনিয়রকে বাইরে জানালার পাশে বসে থাকতে বলি। সে অনেক স্মার্ট আর মেধাবী ছিল। তাকে অনেক কষ্টে রাজি করেছিলাম।
বিনিময়ে সে চেয়েছিল, এক মেয়ের সঙ্গে ড্যান্স দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমি তাতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
পরে শিক্ষকতা জীবনেও আর মনোযোগী হতে পারিনি। ১৭ বছর শিক্ষকতা করেছি। একদিন পড়িওনি, এক লাইন কখনো লিখিওনি।'
কথাগুলো জন করকরানের। নিউ মেক্সিকোর বাসিন্দা তিনি। জন্ম ১৯৪০ সালে। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। কিন্তু যে কথা কখনো কাউকে বলেননি সেই কথাগুলো শেয়ার করেছেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন