প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ভারত সরকার তার সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে অচল সামরিক সরঞ্জামের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছে। সেগুলো ‘যতটা পারা যায় কম খরচে ঘষে মেজে’ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে উপহার হিসেবে দেয়া হবে। ভারতীয় সরকারের একটি সূত্র থেকে এ তথ্য জানতে পেরেছে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
খবরে বলা হয়েছে, কৌশলগত দিক বিবেচনায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা সরকার চাচ্ছে ‘এইসব দেশে ভারতে তৈরিকৃত নতুন প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করতে’। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়েছেন। তারা বলছেন, যে সব অস্ত্রাদি ‘অচল’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, টাকার অভাবে সেগুলো এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিছু নির্দিষ্ট সামরিক সরঞ্জামের দিকে নজর দেয়া শুরু হয়েছে। পুরাতন হয়ে গেছে বা বাতিল হওয়ার পথে এমন আর্টিলারি বন্দুক, সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টার, নৌ টহল যান এবং রাডার সিস্টেমের প্রতি নজর দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভারত শুধুমাত্র ব্যবহৃত এমআই২৫ হেলিকপ্টারটি আফগানিস্তানকে উপহার হিসাবে দিয়েছে। যদিও ভারত প্রতিবেশী কয়েকটি দেশকে নিজেদের তৈরি ‘টহল নৌকা’র মতো কিছু ছোটখাট জিনিসও উপহার দিয়েছিল।
সরকারি ওই সূত্র দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে: ‘বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচনার সময়ে, বিশেষত উচ্চ-পর্যায়ের সফরের সময়ে, বেশ কিছু বন্ধুপ্রতিম দেশ তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য উপহার হিসেবে সেকেন্ড-হ্যান্ড সামরিক সরঞ্জাম চেয়েছে’।
সরকারি সূত্র মতে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল, কিছু আফ্রিকান, মধ্য এশিয়া প্রজাতন্ত্র এবং এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের কিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা এমন অনুরোধ করেছেন। তাদের অনুরোধ পূরণের মাধ্যমে এই দেশগুলোর সাথে গভীর কৌশলগত বোঝাপড়ার দ্বার উন্মুক্ত হবে। এছাড়াও, প্রশিক্ষণ দল প্রেরণ, ভারতে বিশেষ কোর্স করতে আসার প্রস্তাব এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ ও মেরামত সেবা প্রদানের মাধ্যমে ভারত এসব দেশসমুহের সাথে দীর্ঘমেয়াদে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে আফগানিস্তানকে তিনটি এমআই-২৫ হেলিকপ্টার দেয়ার পর উপহার দেয়ার মতো কোন হেলিকপ্টার তাদের কাছে নেই। কর্মকর্তা বলেন, বিমানবাহিনী এখন পর্যন্ত চার দশকের পুরাতন পেচোরা মিসাইল ব্যবহার করছে। এগুলো বাতিলের পর্যায়ে চলে গেছে, কিন্তু এ বছরের প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট কম থাকায় এগুলো বদলানো সম্ভব হচ্ছে না।
সেনাবাহিনীর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপহার দেয়ার জন্য এমন সময়ে, এই ধরনের তালিকা তৈরি করা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, যখন কিনা সশস্ত্র বাহিনী নিজেই এই ধরনের অচল অস্ত্রাদি নিয়ে ধুকিয়ে ধুকিয়ে চলছে।
‘পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটি’র কাছে সেনাবাহিনীর সহকারী প্রধান স্বীকার করেছেন যে, সামরিক বাহিনীর ৬৮ শতাংশ সরঞ্জামই বাতিলের উপযোগী হয়ে গেছে এবং এগুলো পরিবর্তনের জন্য কোন অর্থ তাদের কাছে নেই। অর্থাভাবে সেনাবাহিনী তাদের ব্যয়বহুল কিছু সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত বাতিলও করেছে। এখন তারা গোলাবারুদের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে। এমনকি, টানা ১০ দিন যুদ্ধের সরঞ্জামও এ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর কাছে নেই।
সরকার কতৃক সাম্প্রতিক এই প্রস্তাব অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেস ডিফেন্স অ্যাসেটস (ইডিএ) কর্মসূচির মতো। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পছন্দনীয় দেশের কাছে কম মূল্যে বা অনুদান হিসেবে দিয়ে থাকে। সরঞ্জাম তৈরির মূল খরচ, সরঞ্জামাদির বয়স ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে, মূল দামের পাঁচ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ কমে এই সরঞ্জামগুলো বিক্রি করে দেয়া হয়।
তবে গ্রহীতা দেশকে এগুলোর প্যাকিং, পরিবহন ও সংস্কারের খরচ বহন করতে হয়। ভারতের প্রস্তাবে এগুলোকে ‘উপহার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন