ডলারের দামে তেজিভাব। নিয়ন্ত্রণে নেই উদ্যোগ। বাড়ছে আমদানি পণ্যের ব্যয়। মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা। ফলে বিপাকে পড়ছে ভোক্তা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদনির তুলনায় রফতানি আয় কম। রেমিট্যান্স প্রবাহেও ছিল নেতিবাচক। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে যার চাপ পড়ছে ডলারে। এছাড়া রমজানের কারণে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়াচ্ছেন। এ সুযোগে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডলার ধরে রেখে ডলারের দাম বাড়াচ্ছে। খোলা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের লেনদেন বেড়েছে। এছাড়া ডলারের বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব কারণে ডলারের দাম বেড়েছে। এতে রফতানিকারকরা লাভবান হলেও বাড়ছে আমদানি পণ্যের মূল্য।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের ব্যাংকগুলোতে অব্যাহত বাড়ছে ডলারের দাম। সর্বশেষ মার্কিন ডলারের মূল্য ৮৬ টাকায় উঠেছে। আমদানি পর্যায়ের ডলারের দর উঠেছে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা। ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম ঠেকেছে ১২১ টাকায়।
ডলারের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ডলারের দাম ধারাবাহিক বাড়ছে কয়েকটি কারণে। এর মধ্যে অন্যতম- রফতানি কম আমদানি বেশি, সরবরহের তুলনায় চাহিদার বেশি, খোলা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের লেনদেন বেড়েছে। অর অন্যদিকে দীর্ঘদিন বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ নেতিবাচক ধারায় ছিল। এসব করণে ডলারের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়লে রফতানিকারকরা কিছুটা সুবিধা পেলেও প্রভাব পড়বে আমদানিতে। এতে আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। সর্বশেষ এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম কমাতে বাজারে ডলার বিক্রি করছে। এতে এখন কাজ হবে। দাম কেন বাড়ছে এটি নির্ণয় করে তা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
ডলারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান জাগো নিউজকে মঙ্গলবার বলেছিলেন, আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। এতে ডলারের ওপর চাপ রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ডলার ধরে রাখছে। এসব কারণে ডলারের দাম বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে এটি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব আমাদের। এ বিষয়য়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী- দেশের পণ্য ও সেবা উভয়ের বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। তাই সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতিতে একের পর এক রেকর্ড করছে দেশ। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক নিচ্ছে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক গড় হিসেবে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলারের বিক্রয় মূল্য ছিল ৮২ টাকা ৯৮ পয়সা এবং পাউন্ডের মূল্য ১১৫ টাকা ৬১ পয়সা।
নগদ ডলারের মূল্য সবচেয়ে বেশি উঠেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে (এফএসআইবিএল)। ব্যাংকটিতে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৮৬ টাকা। বিদেশি খাতের সিটি এনএ নগদ টাকায় ডলার বিক্রি করছে ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা, যমুনা ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকই ৮৫ টাকায় ওপরে নগদ ডলার বিক্রি করছে।
একইভাবে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামও বেড়েছে ব্যাংকগুলোতে। বৃহস্পতিবার মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংক প্রতি পাউন্ড বিক্রি করেছে ১২১ টাকায়।
নগদ টাকায় সব চেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি করছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ব্যাংকটির নগদ ডলার বিক্রি করছে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় ডলারের দাম কমেছে। শুধু এখানে বেড়েছে। কারণ ডলারের বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এদিকে ডলারের দাম বাড়ায় সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সর্তক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলারের দর যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বলা হয়। একই সঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ডলার কিনে না রাখতে নিষেধ করা হয়। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক এতে হস্তক্ষেপ করবে বলে ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়। কিন্তু এরপরও টনক নড়েনি ব্যাংকগুলোর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন