গণপরিবহনে নারীদের হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠছেন নারীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ হচ্ছে। আবার কেউ কেউ একাই নেমে পড়েছেন রাস্তায়। শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে প্রখর রোদ মাথায় নিয়ে রাজধানীর শ্যামলীতে সড়কের আইল্যান্ডে পোস্টার হাতে একাই দাঁড়িয়েছিলেন এক তরুণী।
হাতে লেখা পোস্টারে যৌন নিপীড়নবিরোধী বার্তা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানো এই তরুণীর নাম কানিজ ফাতেমা। রাস্তা পারাপারের সময় অনেকেই দেখছেন তার এ প্রতিবাদ। এর আগে গত ২ এপ্রিল ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে রাজধানীর উত্তরায় একাই পথে নেমেছিলেন আফসানা কিশোয়ার লোচন নামের এক নারী।
কানিজ ফাতেমা পড়াশোনা করছেন সিটি কলেজে। যখনই সুযোগ পান, পোস্টার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন তিনি। শুক্রবার রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে নীরবে প্রতিবাদ করেছেন গণপরিবহনে নারীদের হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে। পোস্টারে তিনি লিখেছেন—এই অসুস্থ সমাজটাকে সুস্থ করার দায়িত্ব আমাদের সবার। এগিয়ে আসুন, যেন নিরাপদ থাকে প্রত্যেকটি ঘরের নারী। দিনশেষে যেন কোনও মেয়েকে হতে না হয় ‘ধর্ষিতা’। বন্ধ হোক গণপরিবহনে যৌন হয়রানি, হেল্প লাইন—৯৯৯।
মানুষের সচেতনতা বাড়াতেই রাস্তায় নেমেছেন বলে জানান কানিজ ফাতেমা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আজকেই প্রথম প্রতিবাদ করছি এমন নয়। যখনই সুযোগ হয় তখনই রাস্তায়, বাসে পোস্টার নিয়ে দাঁড়াই। যাতে মানুষ এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আজকে মালিবাগ থেকে সাভার যাচ্ছি, পথে আসাদগেটে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন শ্যামলীতে দাঁড়ালাম। বাসের ভেতরেও কিছু সময় দাঁড়িয়েছিলাম।’
লোকজনের প্রতিক্রিয়া কেমন জানতে চাইলে কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘‘অনেকেই প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ নিজে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন। আবার অনেকে বিদ্রুপের চোখে দেখেছেন। কেউবা প্রশ্ন করেছেন—আমি যৌন নিপীড়নের কী বুঝি। আবার কেউ বলছেন সব পোশাকের দোষ।’’
কেন এভাবে একা দাঁড়ানো প্রশ্নে কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘গণপরিবহনে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা কোনও সুস্থ সমাজে হতে পারে না। গণপরিবহনে নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তাসহ নারীর স্বাধীনভাবে চলাচল নিশ্চিতকরণের দাবি সবার হওয়া উচিত। নাগরিক সমাজকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাতে আমার এ উদ্যোগ।’
প্রসঙ্গত, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গত ২১ এপ্রিল তুরাগ পরিবহনে উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত উত্তরা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ওই ছাত্রী উত্তর বাড্ডা থেকে তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। তখন বাসে যাত্রী ছিল ৭-৮ জন। নাটকীয়ভাবে বাস কর্মচারীরা বাস সামনে যাবে না বলে যাত্রীদের নামাতে থাকে এবং নতুন কোনও যাত্রী উঠানো বন্ধ রাখে। এ সময় ওই ছাত্রীর সন্দেহ হলে তিনি বাস থেকে নামার চেষ্টা করেন। তখন বাসের হেলপার দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কন্ডাক্টর ছাত্রীর হাত ধরে টানতে শুরু করে। কন্ডাক্টর ও হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায় লাফিয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। এরপর তিনি অন্য একটি বাসে চড়ে ইউনিভার্সিটিতে চলে আসেন। পরদিন (২২ এপ্রিল) ঘটনার শিকার ছাত্রীর সহপাঠীরা ওই বাসের হেলপার ও কন্ডাক্টরের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন