জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধনকালে দেওয়া এক ধারণকৃত বার্তায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের মহান লক্ষ্য শান্তি।’ তবে তাঁর বাকি প্রশাসন যে ধারায় কথা বলছে, তাতে প্রেসিডেন্টের উক্তিকে ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু বলা সম্ভব নয়। প্রতি ক্ষেত্রে এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য শুরু হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প তাঁর কথা রাখেন।’ নির্বাচনী প্রচারের প্রতিশ্রুতি পূরণের মধ্য দিয়ে নিজের সমর্থক ঘাঁটিকে ধরে রাখতে চেয়েছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে তাঁর পূর্বসূরিরা যেসব কাজ করেননি বা করতে পারেননি, সেসব কাজ করার একটি প্রবণতা তাঁর মধ্যে আছে। এটাই হচ্ছে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি।
তবে এ ক্ষেত্রে লবিং গ্রুপগুলোর ভূমিকাও কম নয়। এর মধ্যে অবধারিতভাবে আছে ডানপন্থী আমেরিকান ইহুদি—যারা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলের অর্থোডক্স ইহুদিদের প্রভাবিত করেছে প্রতি মুহূর্তে। রয়েছে খ্রিস্টান ইভানজেলিকাল। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি ট্রাম্পকে প্রভাবিত করার কোনো চেষ্টাই বাদ দেননি। এই সব কিছুর মিলিত ফলাফল ট্রাম্প শুধু জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তা করেও দেখিয়েছেন।
তাহলে শান্তিপ্রক্রিয়ার কী হবে? দূতাবাস উদ্বোধনকালে ধারণকৃত বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘স্থায়ী শান্তি চুক্তি সম্পাদনার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ‘কঠিন এক চুক্তি’ করে সংকটের সমাধান করবেন তিনি। জেরুজালেম নিয়ে চরম সংকট সত্ত্বেও হোয়াইট হাউস অর্জন করা সম্ভব, এমন শর্ত দিয়ে চুক্তির খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। এই ‘অর্জনযোগ্য চুক্তির’ শর্ত তৈরির কাজ করছেন ট্রাম্পের জামাতা এবং হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ধর্মবিশ্বাসে ইহুদি জারেড কুশনার এবং তাঁর আইনজীবী জ্যাসন গ্রিনব্লাট। মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক মধ্যস্থতাকারী ডেভিড মিলার বলেন, “এই দুই ব্যক্তি ফিলিস্তিনিদের ‘বাস্তবতার চড়া বার্তা’ দিতে চায়।”
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ট্রাম্পের এই গ্রুপটির ধারণা, ফিলিস্তিনিরা তাদের ওপর শেষ পর্যন্ত আস্থা আনতে বাধ্য হবে। প্রাথমিক শোক ও ক্ষোভ কেটে যাওয়ার পর ফিলিস্তিনিরাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। গত ডিসেম্বরে ট্রাম্পের ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত অবশ্য তেমন কিছু হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকবারই বলেছে, তারা জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিলেও শহরের সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। যদিও ট্রাম্প গত ডিসেম্বরে ঘোষণা দেওয়ার সময় স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘জেরুজালেম ইস্যুকে’ তিনি আলোচনার টেবিল থেকে তুলে নিচ্ছেন। এ নিয়ে আর কথা বলার সুযোগ নেই। ঘোষণার সময় তিনি পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করার বিষয়ে ফিলিস্তিনের দাবি নিয়েও কোনো কথা বলেননি। অর্থাৎ একতরফাভাবে জেরুজালেম ইস্যুতে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছেন তিনি। যে ইস্যুটি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করার কথা ছিল।
গাজায় যে সহিংসতা চলছে তার দায়দায়িত্ব নিয়েও ইসারায়েলের পক্ষ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউস গাজার সহিংসতার জন্য ভূখণ্ডটি নিয়ন্ত্রণকারী হামাসকে দায়ী করলেও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শনের আহ্বান জানায়নি। হামাসের ডাকা ছয় সপ্তাহের প্রতিরোধ আন্দোলন এরই মধ্যে গাজার সীমান্ত ছাড়িয়ে পশ্চিম তীরেও ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি জানান দিচ্ছে, সহিংসতা আরো বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী সব প্রেসিডেন্টই ইসরায়েলপন্থী। তবে ট্রাম্পের পূর্বসূরিরা ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি বোঝারও চেষ্টা করতেন। ২৫ বছর ধরে একটা কাঠামো ধরে নিয়েই শান্তির পথে এগোনোর চেষ্টা করেন তাঁরা। যদিও সাফল্য আসেনি। ওই কাঠামোতে পরিবর্তন প্রয়োজন। তবে পশ্চিমা বিশ্ব সেই পরিবর্তনে ফিলিস্তিনিদের ছাড় দিতে আগ্রহী নয়। পরিবর্তন এসেছে ফিলিস্তিনের আরব প্রতিবেশীদের মধ্যেও। তারা যেকোনোভাবে হোক একটি সমঝোতায় পৌঁছতে আগ্রহী। এতে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষা না হলেও কিছু আসে যায় না। কারণ আঞ্চলিক প্রতিপত্তির লড়াইয়ে ইরানকে রুখতে ইসরায়েলের মিত্রতা এখন অপরিহার্য। আর তা অর্জনে ফিলিস্তিনের স্বার্থ বিসর্জনে তারা পিছপা নয়। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন