তেহরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ঘোষণার পর বিশ্বের বড় দেশগুলো সফর করছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। বলা যায়, তার এই সফর সফলও হয়েছে। কারণ মার্কিন প্রশাসন চুক্তি থেকে সরে গেলেও অন্য দেশগুলো চুক্তিতে বহাল থাকার কথা জানিয়েছে।
চীন ও রাশিয়া ইরানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান ফ্রেদেরিকা মোঘেরিনিও চুক্তি ধরে রাখার পক্ষে সমর্থন দেবেন। শুরু থেকেই এই চুক্তির পক্ষে কথা বলে আসছেন তিনি।
তবে সামনের দিনগুলোতে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইরানের আলোচনা জটিল হয়ে উঠতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে ইরানের সম্পৃক্ততার সমালোচনা করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভ কমাতে ইউরোপের নেতারা ইরানের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ব্যাপারে শর্ত দিতে পারে। এছাড়া সিরিয়ায় বাশার সরকার, লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের প্রতি তেহরানের সমর্থনের বিষয়টি তুলতে পারে তারা।
ইরানের নেতারা বলছেন, প্রতিবেশীরা বৈরী হওয়ায় তাদের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক এক ধরনের অগ্রসর প্রতিরক্ষা কৌশলগত সম্পর্ক রাখতে হচ্ছে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শক্তিধর দেশের উপস্থিতির কারণে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তাদের দরকার।
পরমাণু বিষয়ক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশগুলোর পরামর্শ সত্ত্বেও ইরান বলছে, প্রতিরক্ষা ইস্যুতে কোনো ধরনের আলোচনা করবে না তারা। এমনকি যদি ২০১৫ সালে সম্পাদিত চুক্তিটি বাতিলও হয়ে যায়। ইরানের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান কামাল দেঘানি বলেন, ‘একটি দেশের যেকোনো কাজে জাতীয় নিরাপত্তা একটি প্রয়োজনীয় বিষয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদি জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে কখনোই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে পারবো না। দেশের প্রথম পদক্ষেপ ও ভিত্তিই হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা। জাতীয় নিরাপত্তার ছায়ায় থেকেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব।’
এদিকে বিশ্বনেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র একদিন পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। কিন্তু ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, তারা পারমাণবিক বোমা বানানোর কোনো ইচ্ছাই নেই। তবে মনে হচ্ছে বিশ্বনেতারা তা শুনতে চাইছে না।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দাঘানি বলেন, ‘কখনোই না। আমরা বিশ্বকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের মতো যথেষ্ট জ্ঞান থাকলেও আমরা তা শুরু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই কাজে লাগাবো।’
তবে কেন ইরানকে কেউ বিশ্বাস করছে না?
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হামেদ মুসাভি মনে করেন, এটা হচ্ছে বার্তা পৌঁছানোর ধরনের একটি সমস্যা। মার্কিন প্রশাসনের কড়া কথার প্রতিবাদে ইরান তার কণ্ঠ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। মুসাভি বলেন, ‘আমি মনে করি, গণমাধ্যমে ও চলচ্চিত্রে ইরানের প্রচারণা ইসরায়েলি এবং মার্কিন প্রচারণার চেয়ে অনেক অনেক দুর্বল।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাই ইরানকে দোষারোপ করার সব ধরনের উপাদান তাদের রয়েছে। কিন্তু ইরান এ ব্যাপারে কোনো প্রাজ্ঞ নীতি গ্রহণ করেনি। গত চার দশকে বিশ্বজুড়ে শক্তভাবে আমরা আমাদের বার্তা পৌঁছুতে পারিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র ইরান চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরানের নৈতিক অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আগের চেয়ে দৃঢ় হয়েছে। কিন্তু দেশের ভেতরে সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে রুহানি প্রশাসনকে। জারিফের সফর যদি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং ইরানের অর্থনীতির জন্য কোনো সুফল বয়ে না আনে তবে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তন হবে ভবিষদ্বাণী করেছেন এক ইরানি এমপি।
জাভেদ করিমি গদুসি নামের ওই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি চাই, তিনি (রুহানি) রাষ্ট্রপতির পূর্ণ মেয়াদ পার করুন। আমি তার একজন সমালোচক। কিন্তু তিনি অভিশংসিত হোন বা পদত্যাগ করুন- তার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু তিনি যদি চালিয়ে যেতে চান তবে সরকার সমস্যায় পড়বে। তিনি পদে থাকলে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আমার ধারণা, তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন