আনোয়ার ইব্রাহিমের আইনজীবীরা জানিয়েছেন যে, তাকে রাজক্ষমা দেয়া হয়েছে। তার আইনজীবী সিভারাসা রাসিয়াহ বলেন, ক্ষমা প্রদানের জন্য গঠিত বোর্ডের সদস্যরা বৈঠক করেছেন ও রাজা ইতোমধ্যে তার সকল অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন। যার মানে হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ বাতিল হয়ে গেছে।
কুয়ালালামপুরের চেরাস রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৭০ বছর বয়সী আনোয়ার।সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগে আনোয়ার ইব্রাহিমকে দুবার জেলে যেতে হয়। এর মধ্যে প্রথমবার হচ্ছে ১৯৯০ সালে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগ এনে আনোয়ারকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন মাহাথির নিজেই।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পুনরায় কারাগারে যান আনোয়ার। আনোয়ার অবশ্য বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মুক্তির পর রাজপ্রাসাদে মালয়েশিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম
মুক্তি পেয়েছেন মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। ফলে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে তার ফিরে আসার প্রক্রিয়া আরও একধাপ অগ্রসর হলো। স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি হাসপাতাল (প্রিজন) থেকে বেরিয়ে আসেন। মুক্তির পর হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি রাজপ্রাসাদে গেছেন।
মালয়েশিয়ার রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং আগেই প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারা মুক্তির পর সাক্ষাতের জন্য রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার জেল থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজপ্রাসাদে রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা আগেই জানিয়েছেন উপপ্রধানমন্ত্রী ও আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল।
রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং মঙ্গলবার তাকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এরপর এ বিষয়ে সরকারের সাধারণ ক্ষমা বিষয়ক বোর্ডের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবারই। কিন্তু সেই বৈঠক স্থগিত করা হয় বুধবার সকাল পর্যন্ত। বুধবার সকালে বৈঠকে রাজা ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা নিয়ে আলোচনার পর আনোয়ার মুক্তি পান।
সমকামিতার অভিযোগে আনোয়ার ইব্রাহিম ২০১৫ সাল থেকে জেলে ছিলেন। এ বিষয়ে রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগংয়ের অফিস থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তির সব বিষয়ে সন্তুষ্ট তিনি।
আনোয়ারের দল পার্টি কেদিলান রাকাইয়াত (পিকেআর) ও তার নিজের আইনজীবী আর সিবারাসা বলেছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তি দাবি করে আবেদন জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তিনি ভুল বিচারের শিকার হয়ে শাস্তি ভোগ করছেন। এ ছাড়া তার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
আনোয়ার ইব্রাহিম রাজধানী কুয়ালালামপুরে ছেরাস রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার কাঁধে একটি অপারেশন হয়েছে। আস্তে আস্তে তিনি সুস্থ হযে উঠছেন।
আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরুল ইজ্জাহকে উদ্ধৃত করে শনিবার চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানিয়েছিল, আনোয়ার ইব্রাহিমকে মঙ্গলবারই মুক্তি দেয়া হবে। ওদিকে তিনি মুক্তি পেলেই কি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হবেন কিনা এমন গুঞ্জনও আছে।
তার স্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী আজিজা বলেছেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য কোনো তাড়াহুড়ো নেই। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের ওপর আস্থাশীল। বুধবারের নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট ২২২ আসনের পার্লামেন্টে ১১৩ আসনে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে আনোয়ারের পিকেআর পায় ৪৮ আসন।
এখন মাহাথির প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে তিনিই হবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী- জোট গড়ার আগে এমনই চুক্তি হয়েছে তাদের মধ্যে। কিন্তু এরই মধ্যে বলা হয়েছে, ক্ষমতার প্রথম দু’বছর দায়িত্বে থাকবেন মাহাথির।
এসময়ে সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে আনোয়ারকে তিনি মুক্তি দেবেন। একটি আসনে উপনির্বাচনে তাকে বিজয়ী করে আনবেন। তারপর তার হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। আনোয়ার ইব্রাহিমের বয়স এখন ৭০ বছর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন