মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে নাজিব রাজাকের পরাজয়ের নেপথ্যে রয়েছে ছয়টি অর্থনৈতিক ইস্যু। এগুলো হলো- ১. জীবনধারণের ব্যয় অত্যধিক বেড়ে যাওয়া। ২. জিনিসপত্র ও বিভিন্ন সেবার ওপর সরকার নতুন নতুন কর আরোপ করা। ৩. ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ৪. সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে গঠিত বিশেষ তহবিল ব্যবহার। ৫. নাজিব রাজাকের ৭০ কোটি ডলার আত্মসাত। ৬. আন্তর্জাতিক বিশ্বে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করা।
দুর্নীতির অভিযোগের পরই ২০১৬ সালে বিএন ছেড়ে পাকাতান হারপানে যোগ দেন মাহাথির। তখন তিনি বলেছিলেন, দুর্নীতিকে সমর্থন দেওয়া একটি দলের সাথে যুক্ত থাকা তার জন্য বিব্রতকর। পরে জানুয়ারিতে তিনি ঘোষণা দেন দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আবারো লড়াই করার। মাহাথিরের বিজয়ের মূল মন্ত্র হচ্ছে- ১. কারাগারে বন্দি বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমা ও প্রধানমন্ত্রী করার ঘোষণা। ২. দেশের স্বার্থে নিজের দল ত্যাগ, নতুন দল গঠন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। ৩. তরুণ প্রজন্মের আস্থা অর্জন।
জানা যায়, তরুণ প্রজন্ম মাহাথিরের মতো বয়স্ক নেতার উপর আস্থা রাখার কারণ- তারা পরিবর্তন চাইছেন। বৃদ্ধ হলেও এখনো শারীরিকভাবে সুস্থ তিনি। সরকারের দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ মালয়েশিয়ার তরুণ-তরুণীদের কাছে মাহাথির দাদার মতো, তার বিশ্বাসযোগ্যতা আছে । নবীন প্রজন্ম মনে করে- মাহাথিরের প্রমাণ করার কিছু নেই, সবাই তার সম্পর্কে জানে। তার বিজয়ে ঐক্য অনুভব করছেন তারা। মাহাথিরকে খুবই দূরদর্শী, অভিজ্ঞ বলে মনে করেন তরুণ প্রজন্ম। তারা মনে করেছেন মাহাথিরই মালয়েশিয়াকে দুর্নীতি থেকে টেনে তুলতে পারবেন।
ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ ৯২ বছর বয়সেও ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরকারি দায়িত্ব নিয়ে। এতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ঘুম না হওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন বলে উদ্বিগ্ন তার স্ত্রী ড. সিতি হাসমাহ।
ড. সিতি ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, মাহাথির যখন ঘুমাতে যাওয়ার কথা সে সময়ও তিনি সরকারি ডকুমেন্ট নিয়ে বসে থাকছেন। এক রাতে তাকে আমি ভোর ৪/৫টা পর্যন্ত এমন ডকুমেন্ট যাচাই করতে দেখেছি। তিনি ওই রাতে ২০০ ডকুমেন্ট যাচাই করেছেন। আবার সকাল ৭টায় তিনি অফিসে গিয়ে হাজির। এ জন্য তার স্বাস্থ্য নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।
কর্মব্যস্ত থাকতে পারেন বলেই মাহাথির অনন্য। কাজে ডুবে থাকেন বলে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্বজনেরা দুশ্চিন্তা করেন। টাইম ম্যাগাজিন একবার তার অফিসে আসার সময় রেকর্ড করেছিল। পরপর পাঁচ দিন তার অফিসে প্রবেশের সময় ছিল সকাল ৭:৫৭, ৭:৫৬, ৭:৫৭, ৭:৫৯, ৭:৫৭। কর্মব্যস্ত মাহাথিরের জীবনের সার্থকতা তিনি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পেরেছেন; অর্থবহ কাজে ব্যস্ত থেকে সময়কে কাজে লাগাতে পেরেই তিনি সুখী।
মাহাথির বলেছেন- আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। পেছনের আবর্জনা ঘাঁটার সময় আমাদের হাতে নেই। আমি কোনো প্রতিশোধ নিতে চাই না। জনগণকে নির্যাতন করার জন্য তৈরি করা কোনো আইন রাখা হবে না। আমরা সংবিধান সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। আইনের শাসনমতে দেশ চালাতে চাই।
তিনি আরো বলেছেন- খান কম, অনুশীলন করুন বেশি, বই পড়ুন বেশি। প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা - যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে। সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ধর্ম কখনো অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বাধা হতে পারে না। চিকিৎসা বিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের জন্য রাজনীতি একটি ভালো পেশা। একজন ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, স্বাস্থ্যগত ইতিহাস রেকর্ড করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, ল্যাব পরীক্ষা করেন এবং চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয় করেন। এ প্রক্রিয়াটি রাজনীতির মতই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন