গত পর্বে তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক দিক নিয়ে লিখেছিলাম। এ পর্বে তুরস্কের উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব।
ক. বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা: ২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী তুরস্কে ১৮৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১৯টি আর বেসরকারি ও ফাউন্ডেশন বিশ্ববিদ্যালয় ৬৭টি। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১১৬টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে। এ কে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত একটি আইন করে ২০০৬-২০০৮ সালের মধ্যে ৪১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে সরকার। বর্তমানে তুরস্কে সবগুলো জেলা শহরে কমপক্ষে ১টি করে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
খ. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকার: তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত সব বিষয়ই পড়ানো হয়। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই সমাজবিজ্ঞান, ভাষা ও সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, আইন, তথ্য ও যোগাযোগ, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল বিভাগ রয়েছে। অর্থাৎ তুরস্কের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ধর্মতত্ত্ব ও মেডিকেল বিভাগ রয়েছে। ফলে আলাদা করে ইসলামি ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তবে বেশ কিছু কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা/অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তুরস্কে।
গ. শিক্ষক নিয়োগ: পিএইচডি ছাড়া শিক্ষক নয়
তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী না হলে শিক্ষক হওয়া যায় না। ডক্টরেট ডিগ্রিধারীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক পদবিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ডক্টরেট ছাড়াও শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকে, তবে তা যেমন অল্প তেমনি ওই নিয়োগে সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য উচ্চশিক্ষা কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা কমিশনের ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বাছাইকৃত একটি অংশকে গবেষণা সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব গবেষণা সহকারী শিক্ষকদের দাপ্তরিক ও গবেষণা কাজে সহায়তা করেন। পাশাপাশি পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ডক্টরেট শেষে তাদের মধ্য থেকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ঘ. নেই শিক্ষক রাজনীতি, নেই বৈষম্য: তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনৈতিক পরিচয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহার করেন না। শিক্ষকদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক। কেউ কেউ প্রকাশ্য রাজনীতিতেও জড়িত; কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়কে ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলাদলি তেমন চোখে পড়ে না। মতাদর্শের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা ছাত্রদের প্রতি কোনো বৈষম্য করেন না। ফলে তুরস্কে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুত্বের মতো।
ঙ. ছাত্ররাজনীতি নেই
তুরস্কের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। ফলে নেই কোনো মারামারি, নেই অস্ত্রবাজি; নেই লাশ। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় সন্তানের জীবন নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয় না অভিভাবকদের। শিক্ষার্থীরাও থাকেন নির্ভার। ক্যাম্পাস রাজনীতি না থাকায় তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অনেক বেশি সক্রিয় ও কার্যকর। ফলে শিক্ষার্থীরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের সঙ্গে বেশি জড়িত থাকেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে খেলাধুলাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে যেকোনো পোস্টারিংয়ের জন্য রেক্টর (ভিসি) অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হয়। ফলে কোনো দলীয় বা অবৈধ পোস্টার যেমন থাকে না তেমনি থাকে না দেয়াললিখনও। (কাল পঞ্চম পর্ব)
রহমত উল্লাহ
লেখক: তুরস্ক প্রবাসী পিএইচডি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন