হাইসাম আবু সুলতান। ফিলিস্তিনের এক বোকাসোকা টাইপ আবেগী ছেলে। নিজের দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছে ডাক্তারি শেখার জন্য।
২০০৪-০৫ সেশনে ভর্তি হল সিলেট মেডিকেল কলেজে। তার খুব তাড়াহুড়ো। যাতে সে দ্রুত ডাক্তার হতে পারে। দ্রুত ডাক্তার হতে চাইলেও তার জীবনের উদ্দেশ্য বা এইম ইন লাইফ কিন্তু আমাদের মতো নয়।
বাঙালি বন্ধুরা মাঝে মাঝে টিটকারি মারে। ‘আরে ওই হাইসাম! এত তাড়াহুড়া করস কেন? আস্তে ধীরে ডাক্তার হ। তোর দেশের যে অবস্থা, গেলেই তো মারা পড়বি!’
দেশের কথা বলায় আবু হাইসাম আরও আবেগী হয়, বুক সটান করে দৃঢ়ভাবে বলে- ‘দেশের জন্যই তো তাড়াতাড়ি ডাক্তার হতে চাই। ইসরাইলিরা আমাদের সবাইকে আস্তে আস্তে মেরে ফেলতেছে। ওদের চিকিৎসা দেয়ার চিকিৎসকও এখন আর তেমন অবশিষ্ট নাই। আমারে দেশে ফেরত গিয়া আহত ভাইবোনদের চিকিৎসা দিতে হইব, আমার দিকে আমার দেশের মানুষ চেয়ে আছে। আমারে তাড়াতাড়ি ডাক্তার হতে হইব, তাড়াতাড়ি...।’
যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়- 'আপনার এইম ইন লাইফ বা জীবনের উদ্দেশ্য কী?'-আমি জানি এর উত্তরে একেকজন একেক কথা বলবেন। তবে যে যাই হতে চান না কেন, মূল টার্গেট কিন্তু ভালো থাকা, শান্তিতে থাকা এবং শান্তিতে রাতের ঘুমটা দিতে পারা...।
কী এক অদ্ভুত পৃথিবীতেই না বসবাস করি! পৃথিবীর এক প্রান্তে আমরা যখন আসন্ন সেহরি কিংবা ইফতারিতে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে কোনো প্ল্যাটারটা খাব সেটি নিয়ে ইনডিসিশনে ভুগছি- পৃথিবীর আরেক প্রান্তে হাইসাম আবু সুলতানরা তখন তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে লড়ে যাচ্ছে!
পৃথিবীর এক প্রান্তে আমরা যখন আমাদের পরিবারকে নিয়ে নিঃসংকোচ চিত্তে রাতে ঘুমোতে যাচ্ছি, আরেক প্রান্তে চিকিৎসক হাইসাম তখন তার রক্তমাখা দেহকে অগ্রাহ্য করে তার আহত পরিজনকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নিয়ে তাদের চিকিৎসাসেবাকে নিশ্চিত করছে।
সংবাদমাধ্যমে দেখলাম, ইসরাইলি হামলায় ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুই সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি।
হাইসাম আবু সুলতান কি বেঁচে আছে? আমি জানি না। তবে ছেলেটার বেঁচে থাকাটা খুব প্রয়োজন।
ডা. জামান অ্যালেক্স : বিসিএস মেডিকেল অফিসার
সূত্র: মেডিভয়েস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন