পাকিস্তানের সামরিক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সাবেক কর্মকর্তা আসাদ দুরানির ছেলে ওসমান ভারতের কোচিতে একটি জার্মান এনজিওর হয়ে কাজ করতে এসেছিল৷
কিন্তু ভারত ত্যাগ করার আগেই তাকে মুম্বাই এয়ারপোর্টে নিরাপত্তাকর্মীরা আটক করেন৷ তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতার প্রমাণ ভায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
পরে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্স এন্ড এনালাইসিস উইং ‘র’ কর্মকর্তা দীনেশ্বর সিংয়ের সহায়তায় তাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়৷
ওসমানকে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন খ্যাতনামা ভারতীয় গোয়েন্দা দৌলত৷
কাশ্মীরে শান্তি উদ্যোগের পিছনেও দৌলতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে৷
কোচিতে কোন জার্মান এনজিওর হয়ে আইএসআইয়ের কর্মকর্তার পুত্র কাজ করতে এসেছিল তা নিশ্চয়ই ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর অজানা ছিল না৷
কিন্তু অনেক সময়েই এমন কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, যার জন্য অনেক কিছু জেনেও গোয়েন্দাদের চুপ থাকতে হয়৷ আফগান যুদ্ধের সময়ে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির গোয়েন্দা বিভাগ বিএনডি অস্ত্র ও প্রযুক্তি পাকিস্তানে চোরাচালানের জন্য বহু ফ্রন্ট অর্গানাইজেশন খুলেছিল৷
এর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি পরবর্তীকালে এনজিও হিসাবে ভারতেও তাদের কার্যকলাপ আরম্ভ করে৷
বিশেষ করে ১৯৮৩ সালে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর তার এসব কার্যক্রম শুরু করে৷ রাজীব গান্ধীর আমলে সার্ক গঠিত হওয়ার পর এই তৎপরতা বাড়ে৷
এই ধরনের জার্মান এনজিওগুলির মধ্যে একাধিক সংস্থাই ভারতে প্রাক্তন মাওবাদীদের দ্বারা পরিচালিত হয়৷ এ খবরও ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর অজানা নয়৷
ওসমানকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হলেও বিনিময়ে পাকিস্তানে ‘ধৃত’ ভারতীয় গোয়েন্দ কূলভূষণ যাদবের ক্ষেত্রে ফেরত দেয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পাকিস্তান।
বরং পাকিস্তানের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কূলভূষণের বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পাকিস্তান আদালত তাকে ফাঁসি দেয়ার রায় দিয়েছে।
কূলভূষণ যাদবকে ফাঁসি দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ অনড়।
কিছু দিন আগে কূলভূষণ যাদবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তার বিধবা মা ও স্ত্রী৷ কূলভূষণের সঙ্গে তারা দেখা করতে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি তার স্ত্রীকে মঙ্গলসূত্র খুলতে বাধ্য করেছিল৷
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে পাকিস্তানের হাজার হাজার সেনা আটক হয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর জেনেভা কনভেনশন মেনে খানসেনাদের যুদ্ধবন্দি হিসাবে মর্যাদা দিয়ে পাকিস্তানে ফেরত পাঠিয়েছিল ভারত৷
রাজনীতি এক অদ্ভূত ব্যাপার৷ সেখানে এমন কিছু সমীকরণ কাজ করে যার জন্য নিরাপত্তার কাজে যারা যুক্ত তাদের নানাভাবে আপস করতে হয়৷
আবার সেই আপসে সফলতা পেলে নিরাপত্তা বাহিনীর কৃতিত্বের জায়গায় রাজনীতিকদের মর্যাদাই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷
যদি গোয়েন্দা অফিসার দৌলতের মধ্যস্থতায় জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ফেরে তাহলে তার বদলে রাজনীতিকদের প্রচারই বেশি হবে৷ ওসমানকে সসম্মানে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর জন্যও কি দৌলতের উপর তেমন কোনও রাজনৈতিক চাপ ছিল?
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন