মালয়েশিয়ার ঋণের বোঝা ১ ট্রিলিয়ন রিংগিট (২৫১.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। এজন্য তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সরকারকে দোষারোপ করছেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
মহাথির নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় তহবিল ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাড’ (1এমডিবি) থেকে কোটি কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। দেশটিকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ৯ জুনের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মাহাথির বলেন, ‘দেশের অর্থ ব্যবস্থাটি এমনভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে যে এখন আমাদের ঋণের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন রিংগিটে দাঁড়িয়েছে। এটি আমাদের জন্য এখন বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আগে কখনো এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়নি। আগে আমরা ৩০০ বিলিয়ন রিংগিটের বেশি ঋণের মুখোমুখি হইনি কিন্তু এটি এখন ১ ট্রিলিয়ন রিংগিটে পৌঁছেছে।’
জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচের হার কমানোর জন্য তিনি জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন।
নাজিব সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে কোটি কোটি ডলার লুণ্ঠনের অভিযোগ তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। নতুন এই টাস্কফোর্স লুণ্ঠিত সম্পদ ফেরত আনা ও সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গত বুধবার (৯ মে) মালয়েশিয়ায় ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পান দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তার এই বিজয় ব্রিটেন থেকে দেশটির স্বাধীনতা লাভের ৬১ বছরের মধ্যে সরকার প্রথম পরিবর্তনের দরজা খুলে দেয়।
এর মধ্যদিয়ে ক্ষমতা হারায় দীর্ঘ ৬০ বছর ক্ষমতায় থাকা বারিসান ন্যাশনাল। মাহাথির এই বারিসান ন্যাশনালের নেতা হিসেবেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন।
ভোটের এই ফলাফল অনেকটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্পের মতো, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে এক পক্ষের শাসনের প্রবণতা রয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রবণতা আরো বেশি কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে মোড় নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নির্বাচিত নেতা হিসেবে ইতিহাস গড়েন মাহাথির মোহাম্মদ। এর আগে টানা প্রায় ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে তিনি ক্ষমতা থেকে সরে যান। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের রাজনৈতিক জোট বারিসান ন্যাশনালকে (বিএন) হারিয়ে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর দেশটিতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সব আশঙ্কার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত শপথ নিলেন মাহাথির।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন