কয়েক মাস আগের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদগুলো পড়লে দেখা যাবে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে স্বৈরাচার বলেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এখনো হয়তো আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুটা হলেও এর ধরন পাল্টেছে। আগে বলা হতো গণপ্রজাতন্ত্রী উত্তর কোরিয়ায় স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন কিম জং উন। দুই দিন আগেও তাকে স্বৈরশাসক বলা হয়। এমনকি তাকে বলতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যায়িত করে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ফক্স নিউজ। কিন্তু গতকালের পরিস্থিতি কিম জং উনকে অনেক পাল্টে দিয়েছে। তিনি স্বৈরশাসক থেকে এখন বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন।
সুইজারল্যান্ডে পড়ালেখা করে আসা ৩৪ বছর বয়সী নেতা কিম জং উন ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উত্তর কোরিয়াকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। তিনি বিচ্ছিন্ন দেশের নেতা হিসেবেই পরিচিত। কয়েক মাস আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছেন নিজের কাকা, সৎ ভাই এবং তার বিরোধী সরকারি কর্মকর্তাদের। এমনকি তার অনুষ্ঠানে ঘুমানোর কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে এক সেনাপ্রধানকেও। তার মতের সঙ্গে মিল না হওয়ায় কয়েকদিন আগে চাকরিচ্যুত হয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানসহ তিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা।
উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাস করা অহন চ্যাং-ইল বলেন, এই যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে কিম জং উন দেশের ভেতর অনেক বেশি সম্মান অর্জন করবেন। উত্তর কোরিয়ানরা এটা দেখতে পাবেন যে, তাদের নেতা কেবল তাদের নেতাই নন, আন্তর্জাতিক সমাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি এখন ট্রাম্পের পর্যায়ে চলে গেছেন। অহন চ্যাং-ইল বলেন, কিমের মূল উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল হয়েছে। তাকে এখন আর অবজ্ঞা করা যাবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা বিশ্বের কাছে কিম জং উন পরিচিত হয়ে উঠলেন একজন সমঝোতাকারী হিসেবে। শেষ পর্যন্ত তার কথা ঠিক থাকবে কিনা সেটা নিশ্চিত হতে হলে আরো অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা তাকে আরো সম্মানিত করে তুলেছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই বৈঠক আমার জন্য সম্মানের এবং আমি নিশ্চিত যে আমাদের মধ্যে চমত্কার সুসম্পর্ক তৈরি হবে। ট্রাম্প বলেছেন, কিমকে অবশ্যই আমি হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাবো। এছাড়া তার সঙ্গে ‘বিশেষ বন্ধন’ তৈরির কথা বলেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, কিম খুবই প্রতিভাবান। তিনি খুব কম বয়সে একটি দেশের ক্ষমতা নিয়েছেন ও কঠোরভাবে দেশটি পরিচালনা করছেন। ট্রাম্প বলেছেন, কিম এরইমধ্যে প্রধান মিসাইল পরীক্ষার জায়গা ধ্বংস করছেন। ট্রাম্প বলেছেন, পরিবর্তন আসলেই সম্ভব। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান কিমের সাথে আমার বৈঠক আন্তরিক, গঠনমূলক আর খোলামেলা ছিল। অত্যন্ত ঘটনাবহুল ২৪ ঘন্টা পার করলাম আমরা। সত্যি বলতে ঘটনাবহুল তিনটি মাস পার হলো। উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, অবিশ্বাস্য একটি জায়গা হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করার সম্ভাবনা আছে তাদের। আর কিম বলেন, এখানে আসা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমাদের অতীতের বিশ্বাস ও ধ্যানধারণা এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু সেসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়েই আমরা আজ এই পর্যন্ত এসেছি।
বিবিসির সাংবাদিক রুপার্ট উইংফিল্ড হায়েস বলেন, এই বৈঠকটি উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি বড় বিজয়। অতীতের যেকোনো সম্পর্ক থেকে এটি ট্রাম্পের জন্যও বড় জয় এবং সে তার (কিমের) সাথে দেখা করতে পেরে সম্মানিত। কয়েকমাস আগেও যে লোকটিকে তিনি ‘লিটল রকেট ম্যান’ বলেছিলেন এবং বিশ্বের নিন্দিত যুগের নেতা বলে অভিহিত করেছিলেন, তার সাথে এই বৈঠকটি সত্যিই অসাধারণ।
বিবিসি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন