বিভিন্ন দেশের মানুষের মানুষের প্রতি আলবার্ট আইনস্টাইনের বর্ণবাদী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে তার সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যক্তিগত ডায়রিতে। বিদেশ ভ্রমণের সময় ভিনদেশিদের সাথে সাক্ষাত হলে তাদের সম্পর্কে কুৎসিত বর্ণবাদি মন্তব্য তার ব্যক্তিগত ভ্রমণ ডায়রিতে লিখে রাখতেন আলবার্ট আইনস্টাইন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা জানিয়েছে, বিখ্যাত এই পদার্থবিজ্ঞানী চীনের মানুষদেরকে 'পরিশ্রমী, নোংরা, স্থূলবুদ্ধির' মানুষ বলে বর্ণনা করেন।
আইনস্টাইন শুধু বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, তিনি সব মানুষের সমান অধিকারের কথাই বলতেন। কিন্তু এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময়ে তিনি যেসব জঘন্য মন্তব্য করেছেন, তা হতবাক হয়ে যাওয়ার মতো।
১৯২২ সালের অক্টোবর থেকে ১৯২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি চীন, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ফিলিস্তিন ও স্পেন ভ্রমণ করেন।
গত সপ্তাহে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস তার ব্যক্তিগত ডায়রিগুলো প্রকাশ করে। সংস্থাটি জানায়, 'বিভিন্ন দেশের মানুষ সম্পর্কে আইনস্টাইন যে গৎবাঁধা বস্তাপচা মনোভাব নিয়ে চলতেন তা প্রকাশ এই ডায়রিগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে, এবং জাতিবর্ণের মানুষের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।'
ডায়রির এক জায়গায় নোবেল বিজয়ী এই বিজ্ঞানী লেখেন, চৈনিকরা 'একটা অদ্ভুত পশুর পালের মতো জাতি... মানুষের চেয়ে আবেগহীন যন্ত্রের সাথে এদের মিল বেশি।'
চীনাদের 'বাচ্চাকাচ্চার আধিক্য' ও তাদের 'উর্বর প্রজনন ক্ষমতার' কথা লেখার পর, তিনি যোগ করেন, 'এসব চাইনিজ অন্য সব জাতির মানুষকে ছাড়িয়ে গেলে তা খুব দুঃখজনক হবে। আমাদের মতো মানুষদের জন্য এটা চিন্তা করাও অকথ্য রকম বেদনাদায়ক।'
ডায়রিতে অন্য এক জায়গায় তিনি মিশরের পোর্ট সাইদ বন্দরে জাহাজে ওঠা আরব অঞ্চলের মানুষদের 'ডাকাতের মতো নোংরা লেভান্টাইন' হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি লেখেন, 'বন্দরে নৌকায় হাত-পা নেড়ে চিৎকার করতে থাকা সব বর্ণের লেভান্টাইনরা আমাদের জাহাজের দিকে ছুটে আসে। মনে হচ্ছিল তারা একদম নরক থেকে হুড়হুড় করে নেমে এসেছে।'
আইনস্টাইনের ভ্রমণ ডায়রির বই আকারে প্রকাশের সময় সম্পাদনা করেন জিইভ রোজেনক্রাঞ্জ। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলোজির আইনস্টাইন পেপার প্রজেক্ট-এরও সহকারী পরিচালক।
ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে রোজেনক্রাঞ্জ বলেন, 'আইনস্টাইনের অনেকগুলো মন্তব্য অত্যন্ত অপ্রীতিকর মনে হচ্ছে আমাদের কাছে। বিশেষত চৈনিকদের সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন সেগুলো।'
'মানুষের কাছে একজন মহান মানবতাবাদি হিসেবে পরিচিত একজন ব্যক্তির সাথে এসব মন্তব্য মেলেনা। জনসমক্ষে তিনি যা বলতেন, তার সাথে এসব মন্তব্যের ফারাক দেখলে চমকে উঠতে হয়। এগুলো একদম মন থেকে লেখে এবং কখনও প্রকাশ করা হবে বলে মনে করেননি।'
বইয়ের ভুমিকায় রোজেনক্রাঞ্জ লেখেন, এসব পড়তে পড়তে 'আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম: মানবতাবাদের এই প্রতিমূর্তি কিভাবে এসব কথা লিখতে পারলেন।'
১৯২১ সালে নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরপর বক্তৃতা দেয়ার জন্য আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানায় জাপান। তখন তিনি এশিয়া ভ্রমণ করেন।
চীনাদের বিরুদ্ধে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবের বিপরীতে তিনি জাপানের সম্পর্কে ভাল ভাল কথা লেখেন। জাপানিদের তিনি, 'আড়ম্বরহীন, শালীন, সব মিলিয়ে খুব মনোগ্রাহী' বলে বর্ণনা করেন।
এই সময় আইন্সটাইনের লেখা ভ্রমণ বিষয়ক ডায়রিগুলো আগে জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল আইনস্টাইনের ১৫ রচনাবলীর অংশ হিসেবে। এবার এগুলো ইংরেজিতে প্রকাশিত হল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন