ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগের জন্য ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত এই নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ১২০টি দেশ ভোট প্রদান করেছে। এতে গাজার হামাস শাসকদের অভিযুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে ১২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে।
বিশ্বের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১২০টি দেশ এবং বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র আটটি দেশ। ৪৫টি সদস্য ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল।
প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ‘অত্যধিক, অসম ও বৈষম্যমূলক শক্তি’ প্রয়োগের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করা হয় এবং ৬০ দিনের মধ্যে অধিকৃত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার উপায় এবং আন্তর্জাতিক পন্থা খুঁজে বের করতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে আলজেরিয়া ও তুরস্ক কর্তৃক এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এই প্রস্তাব মেনে চলা যদিও আইনত বাধ্যতামূলক নয়, তবে রাজনৈতিকভাবে এর গুরুত্ব রয়েছে।
ভোটে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থেকে অস্ট্রেলিয়া, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং টোগো এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যাকার অধিবাসীরা গত ৩০ মার্চ থেকে নিজেদের ভূমিতে ফেরার লক্ষ্যে গাজা সীমান্তে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করে আসছে। এসব বিক্ষোভ মিছিলে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ১৩১ ফিলিস্তিনি শহীদ এবং ১৩,৯০০ জন আহত হয়।
গত ১৪ মে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের দিনটিতে এক দিনেই ৬২ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি সৈন্যরা।
চলতি জুন মাসেই গাজা উপত্যকা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোলা কুয়েতের একটি প্রস্তাবে আমেরিকা ভেটো দেয়ার পর ওই প্রস্তাবের পক্ষের দেশগুলো বিষয়টি সাধারণ পরিষদে তোলে এবং গতকাল তারই ওপর ভোটাভুটি হলো।
এদিকে, গতকাল সাধারণ পরিষদে আমেরিকা একটি পাল্টা প্রস্তাব তোলে যাতে গাজায় সহিংসতা সৃষ্টির জন্য ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নিন্দা করা হয়। তবে সে প্রস্তাব দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ৬২টি আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৫৮টি দেশ। ৪২ দেশ ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর মার্কিন প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ‘এতে বিভ্রান্ত না হতে আমি অন্য রাষ্ট্রদূতদের প্রতি আহ্বান জানাব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা খুব সাধারণ কিছু চাইছি, আমরা চাই আমাদের জনগণ সুরক্ষিত থাকুক।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত ফেরিদুন হাদি সিনিরওগ্লু গাজা প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে অবস্থান নেয়া এবং এটা প্রমাণিত হলো যে, সারা বিশ্ব ফিলিস্তিনি জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি খেয়াল রেখেছে। সূত্র: আল জাজিরা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন