স্রোতের মতো দেশে ফিরতে শুরু করেছেন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা। প্রতিমাসে গড়ে ২শ নির্যাতিত নারী শ্রমিক দেশে ফিরছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই যৌন হেনস্থার শিকার। গৃহকর্মীর কাজের কথা বলে অবিবাহিত মেয়েদের বিদেশে নিয়ে দেহব্যবসা করানোর মতো জঘন্য অপরাধের তথ্যও মিলেছে। এর ফলে কুমারীরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে দেশে ফিরছে। লোকলজ্জায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নিঃস্ব ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। এছাড়াও নানাভাবে শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা। দেয়া হচ্ছে না তাদের পারিশ্রমিক। দেশে ফেরত আসার জন্য বর্তমানে সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এমন নারী গৃহকর্মীদের ঢল নেমেছে। নির্যাতিতাদের জন্য দূতাবাসে অন্তত চার বছর আগেই খোলা হয়েছে ‘সেফহোম’। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমত গলদঘর্ম অবস্থায় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সৌদিতে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে শুধু যে দেশে ফিরছেন আর দূতাবাসের সেফহোমে অবস্থান করছেন তা নয়। হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়ে অনেকে সেদেশে কারাবন্দীও রয়েছেন। হত্যার শিকার বা বাধ্য হয়ে আত্মহত্যাও করছেন কেউ কেউ। এসব ঘটনার খুব সামান্যই গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দেশের হাজার হাজার নিরীহ নারীকে এভাবে বিদেশের মাটিতে চরম নির্যাতন ও বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দেয়ার পেছনে মূলত দায়ী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। অথচ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা এখন এ পরিস্থিতিতে একেবারেই নির্বিকার। বরং তারা নিজেদের দায় শুধু দালালদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে পার পেতে চাইছে। সূত্রমতে, সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিককে গৃহকর্তাদের ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়নের বিষয়টি নতুন নয়। তাদের ওপর পৈশাচিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ বরাবরই রয়েছে। সরকার এটি জানার পরও নারী শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে নীতিমালা শিথিল করে সৌদিতে কেন ব্যাপকহারে যুবতী মেয়েদের নিরাপত্তাহীনভাবে পাঠাতে উদ্যোগী হলো- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ আছে। আর সৌদিতে এত মেয়ে মানুষের চাহিদা হঠাৎ কেন বেড়ে গেল- তা খতিয়ে না দেখে তাদের চাহিদা মতো মেয়ে পাঠানোর দায় মন্ত্রণালয়ের উপর বর্তায়। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ দেশে ফেরত গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। কারণ, এসব গৃহকর্মীকে সৌদি আরবে পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালচক্রের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সরাসরি জড়িত। দালালচক্র মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। মন্ত্রণালয় ব্যাপকহারে নারী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দলাল সিন্ডিকেট গ্রাম-গঞ্জ থেকে দরিদ্র, অসহায়, নিরীহ ও অশিক্ষিত নারীদের ভুলভাল বুঝিয়ে এনে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। আর এর ফলে বর্তমান বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
তিন দিনেই দেশে ফিরেছেন শতাধিক নির্যাতিতা
গত ১৮ থেকে ২০ মে, মাত্র তিন দিনেই সৌদি আরবে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার ও পারিশ্রমিক বঞ্চিত শতাধিক নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে ২০ মে রাত সাড়ে ১০টায় আসেন ২১ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সিলেটের রেবা, মৌলভীবাজারের লিলি আক্তার, হবিগঞ্জের রুবীনা ও খাইরুন্নেসা, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঝর্না প্রমুখ। এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে চড়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা অবতরণ করেন। এরা সবাই অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে সৌদি আরবে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। পরে অয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এই নারী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগের দু’দিনে আসেন নির্যাতিত ৮৮ নারী গৃহকর্মী। এর মধ্যে ১৯ মে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ৮৩ জন। ফিরে আসা এই নারী শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন- সুনামগঞ্জের তাসলিমা আক্তার, রূপগঞ্জের সাথী, ভোলার জোসনা, কেরানীগঞ্জের মল্লিকা, বরগুনার শাহনাজ, কক্সবাজারের শাকিলা, দিনাজপুরের মনজুরা বেগম, ফরিদপুরের মাজেদা বেগম, নওগার শম্পা প্রমুখ। একই এয়ার লাইনের আরেকটি ফ্লাইটে ১৯ মে রাত ৯টায় তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। এর আগের দিন ১৮ মে ফিরেছেন ৫ জন নির্যাতিতা। এখন তাদের সামনে শুধুই অন্ধকার। কারণ, আত্মীয়-স্বজন, সমাজও তাদের ভালো দৃষ্টিতে দেখছেনা। অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় একেবারেই নির্বিকার।
নির্মম নির্যাতন
১৯ মে ফেরত আসা মল্লিকা জানান, সৌদি আরবে প্রতিনিয়ত তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাকে আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক দেয়ার পাশাপাশি রড গরম করে ছেঁকা পর্যন্ত দেয়া হতো। দিনাজপুরের মনজুরা বেগম বলেন, ‘আমার পাসপোর্টসহ ইজ্জত-সম্মন সব দিয়ে (ধর্ষিতা হয়ে) এসেছি। মালিকের নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসে যাই। দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে আসি।’ দু’বছরের চুক্তিতে সৌদিতে গেলেও মাত্র ১১ মাস পরে গত ১৯ মে খালি হাতে দেশে ফিরে এসেছেন সুনামগঞ্জের তাসলিমা আক্তার। তিনি বলেছেন, ‘অনেক আশা নিয়ে ওই দেশে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম তেমন কিছু না। দালাল বলেছিল, সেখানে গেলে ২০ হাজার টাকা বেতন দেবে। মোবাইল দেবে। দেশে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেবে। কাপড়চোপড়-সাবান, তেল- সবকিছু ফ্রি। কিন্তু আসলে তেমন কিছু না। ঠিকমত বেতনও দেয় না। আমার আট মাসের বেতন বাকি। নিজের গাঁট থেকে টাকা দিয়ে সবকিছু কিনতে হয়।’ এক সাক্ষাৎকারে তাসলিমা বলেন, ‘আমি নিয়োগকর্তা মহিলাকে বলেছিলাম, সাত-আট মাস বাড়িতে টাকা পাঠাইনি, বেতন দে। সে আমার ওপর হাত তুলতে চেয়েছিল। তখন আমি পুলিশকে ফোন করি। পুলিশ আমাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি হাজার হাজার মেয়ে। অনেককে মেরেছে, কারো হাত ভেঙেছে, কারো পা ভেঙেছে, কারো গায়ে গরম পানি দিয়েছে- অনেক রকম নির্যাতন করেছে। কোনো কোনো মেয়েকে নিয়োগদাতার ছেলেরা খারাপ (ধর্ষণ) নির্যাতন করেছে। কাউকে কাউকে এক দেড় বছর খাটিয়েছে, বেতন দেয়নি। সে তুলনায় আমার কমই হয়েছে- আমি এগারো মাস থেকেছি, পরনের কাপড়টাই ঠিকমত দেয়নি,’ -বলছিলেন সৌদি ফেরত তাসলিমা।
একই সঙ্গে দেশে ফেরাদের মধ্যে আছেন- হবিগঞ্জের নাজমা (ছদ্মনাম)। সেদেশে গৃহকর্মী জীবনের করুণ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের যে অবস্থা, তাতে নারীদের ভিসা বন্ধ করে দেয়া উচিত।’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাজমা জানান, সৌদি আরব যাওয়ার আগে তিনি ওমানে কাজ করেছেন এক বছর। তার কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল এবং আরবি ভাষাও জানা ছিল। পরে প্রায় এক বছরের মতো থেকেছেন সৌদি আরবের রিয়াদে। নাজমা বলেন, ‘সৌদি আরবের যে অবস্থা, তাতে নারীদের ভিসা বন্ধ করে দেয়া উচিত। সেখানে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোনো কোনো মালিক ইচ্ছে করেই পুলিশে অভিযোগ করে ধরিয়ে দেয়। আমার ৩ মাসের বেতন দেয়নি। আমরা এই বিমানে এসেছি ৭০-৮০ জনের মতো। রিয়াদের কারাগারে আছে আরও ৪০ জনের মতো।’
একই ফ্লাইটে ফিরেছেন চাঁদপুরের নাহার বেগম (ছদ্মনাম)। আরবি ভাষা তারও জানা। সেখানে যাওয়ার পর তাকে ১৫ দিনের মতো বিমানবন্দরেই রাখা হয়েছিল। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে। যে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি নাহারকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। নাহার বলেন, ‘আমাকে প্রথমে বলেছে এক হাজার রিয়াল বেতন দেবে। কিন্তু কাজের চুক্তি করার সময় দেখি ৮০০ রিয়াল। তারপরও কাজ করলাম। কিন্তু মালিকের ব্যবহার ছিল খুবই খারাপ। কথায় কথায় গালি দিতো। আরবিতে বলতো, মিসকিন, তোরা মিসকিন। আমাদের কিনে নিয়েছে, অনেক টাকা দিয়ে এনেছে-এসব কথা বলতো।’ নাহার জানান, মারধরের সময় তার মালিক হাত দিয়ে কান বরাবর আঘাত করতো। একদিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে চলে যান। মালিক তার পাসপোর্ট রেখে দিয়েছে। পরে দূতাবাস আউটপাস দিয়ে অন্যদের সঙ্গে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে নাহারকেও।
ভয়াবহ যৌন নিপীড়ন জেনেও মন্ত্রণালয় নিরীহ নারীদের সেই পথে ঠেলে দিয়েছে
বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়া নারীদের ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতন হঠাৎ করে শুরু হয়নি। একই নারীর ওপর পিতা-পুত্র মিলে দিনের পর দিন যৌন নিপীড়ণ চালানোর তথ্যও গণমাধ্যমে এসেছে। অন্তত চার বছর আগে গৃহকর্মী নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ব্যাপকতা দেখা দেয়ার পরও বন্ধ হয়নি সেদেশে তরুণী মেয়েদের পাঠানো। বরং নির্যাতনের বিষয়গুলো গোপন রাখার চেষ্টা চালিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবসহ বাংলাদেশ দূতাবাস। কিন্তু যৌন হেনস্থার ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে সম্প্রতি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই। গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানিয়েছে, নিয়োগকারীদের দ্বারা যৌন ও শারীরিভাবে নিপীড়নের শিকার হয়ে শত শত নারী কাজ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এসব নারীদের থাকার জন্য সৌদির জেদ্দা ও রিয়াদসহ বিভিন্ন শহরে আশ্রয় কেন্দ্র (সেইফহোম) খুলতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। রিয়াদ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ফাঁস হওয়া গোপনীয় কূটনৈতিক বার্তা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে বলে দাবি মিডলইস্ট আই’র। ঢাকার একজন কূটনীতিককে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পালিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা নারীরা অভিযোগ করেন- নিয়োগকর্তারা তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন চালান। কেউ আবার অসুস্থ হয়েও আসেন। তাই তারা এখানে আশ্রয় নিতে চান।’ ২০১৫ সালে লেখা ওই কূটনৈতিক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ জন নারী আশ্রয় কেন্দ্রে আসেন। অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা নারীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তারা আশ্রয়ে কেন্দ্রে আরও আসন বৃদ্ধি ও সিসিটিভি পাঠানোর অনুরোধ করেছেন ওই বার্তায়। ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, জেদ্দা এবং রিয়াদে অন্তত ২৫০ জন নারী আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে ৫ হাজারের কিছু বেশি নারী সৌদি গিয়েছিলেন। কিন্তু গত চার বছরে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী যাওয়ার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর ২০১৫ সালে যান ২১ হাজার জন, ২০১৬-তে ৬৮ হাজার, ২০১৭-তে ৮৩ হাজার বাংলাদেশি নারী সৌদিতে গিয়েছেন। আর চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে গেছেন ১৬ হাজারের বেশি। যদিও একই সময় নিপীড়নের হারও ব্যাপকহারে বেড়েছে। বেড়েছে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা নারীর সংখ্যাও।
‘গার্মেন্টসে চাকরি করে খাবো, তবু আর বিদেশে যাবো না’
নিরাপদ অভিবাসনের পক্ষে কাজ করে বাংলাদেশের এমন একটি প্রতিষ্ঠান বলছে, নানা নির্যাতন, হেনস্থার শিকার হয়ে সৌদি আরব থেকে নারী শ্রমিকদের ফিরে আসার সংখ্যা সম্প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, ‘জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মাসে গড়ে প্রায় দু’শজন করে নারী কর্মী সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন। তাদের অনেকেই ফিরে যৌন নির্যাতন থেকে শুরু করে নানা ধরনের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।’
গত ১৯ মে দেশে ফেরত তাসলিমা আক্তার বাংলাদেশ দূতাবাসে ছিলেন চার মাস। তাসলিমা আক্তার বলছিলেন, ‘আমার প্রায় আট মাসের বেতন বাকি। বেতন চাইলে বলে তোর আকামা হয়নি, আকামা করাতে আড়াই লাখ টাকা লাগবে- এরকম অনেক কিছু বোঝাতো।’ তিনি বলছিলেন, ‘আমার নিয়োগদাতা আমাকে আসতে দেয়নি। আমার নামে কেস করেছে, যাতে জীবনেও বাংলাদেশে আসতে না পারি। মামলায় বলেছে, আমাকে আনতে তাদের চার-পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে -সেই টাকা আমাকে ফেরত দিতে হবে। তখন আমি দূতাবাসে অনেক কান্নাকাটি করেছি। হাতে পায়ে ধরেছি আমাকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য। কিন্তু তারা বললেন, তোমার নামে তোমার কফিল (নিয়োগদাতা) মামলা করেছে। আমি বললাম, আমার যে বেতন বকেয়া তাতে প্রায় দুই-আড়াই লাখ টাকা হয়- সেটা আমি আর চাই না। আমি দেশে ফিরে যাবো। তারা আমাকে কোর্টে তুলেছে। আদালতের রায় পাবার পর আমি দেশে ফিরি। কোন টাকা-পয়সা নিয়ে ফিরতে পারিনি। বরং বাড়ি থেকে আরো লাখখানেক টাকা নিয়েছি।’ তার ভাষায়, যে মেয়েরা এখনো আরব দেশে যেতে চায়- তারা বুঝতে পারছে না, সৌদি বা অন্য আরব দেশেরও পরিস্থিতি এখন অনেক খারাপ। যারা ফিরে এসেছে তারা কেউ আর সেখানে যেতে চায় না। আমি গার্মেন্টসে চাকরি করে খাবো, তবু বিদেশে যাবার নাম আর করবো না।’
সৌদিতে বাংলাদেশি গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ
সৌদি আরবের তুরবাহ থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে মরুভূমির মাঝখানে গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় বাংলাদেশি এক নারী গৃহকর্মীর লাশ পাওয়া যায়। আল বাহা তায়েফের মাঝামাঝি তুরবাহ শহর। চলতি মের ৮ তারিখে পাওয়া ওই লাশের সঙ্গে ইকামাতে নাম পাওয়া গেছে কোহিনূর বেগম। ইকামা চেক করে পুলিশ গৃহকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। গৃহকর্তার দাবি, ঘটনার দু’দিন আগে কোহিনূর তার বাসা থেকে পালিয়ে যায়। তারপর কোহিনূরের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, যৌন নির্যাতনসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে কোহিনূর ওই বাসা থেকে পালিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কোহিনূরের লাশ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ঘটনাটি দেশটির পুলিশের নিবিড় তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
শুধু সৌদি নয়, সব দেশেই নারী শ্রমিকরা যৌন হেনস্তার শিকার
সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮৯ জন বাংলাদেশি শ্রম অভিবাসীর মধ্যে ৭ লাখ ২৭৮ জন নারী রয়েছেন। বিদেশে অবস্থানরত এই নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে এসব নারী শ্রমিক বাড়িঘর, সংসার- সবকিছু হারাচ্ছেন ঋণের কারণে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিদেশে অবস্থানরত নারী শ্রমিকদের বড় অংশকেই নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত নির্যাতিত কোনো নারী শ্রমিকের পক্ষে সংশ্লিষ্ট কোনো দূতাবাস নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশি নারী কর্মীদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কূটনীতি শক্তিশালী নয় বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। যারা এসব নারীকে বিদেশের মাটিতে ঠেলে দিচ্ছে সেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে চরম দায়িত্বহীনতা দেখাচ্ছে।
জানা গেছে, যেখানে বেশিরভাগ পুরুষ শ্রমিক গড়ে ৫০ ভাগ টাকা প্রেরণ করেন সেখানে গড়ে নারী শ্রমিকরা ৯০ ভাগ টাকা দেশে প্রেরণ করছেন। জিরো মাইগ্রেশনে নারী শ্রমিকরা বিদেশ যেতেও প্রত্যেক নারীকর্মী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দালালি দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে নারী শ্রম অভিবাসী ছিলেন ১ লাখ ২১ হাজার ৯৮৫ জন। এরমধ্যে ৮৩ হাজার নারী শ্রমিক সৌদি আরবে। বর্তমানে ২ লাখ ৪ হাজার ৭২৯ জন নারী রয়েছেন সৌদি আরবে। বাংলাদেশি মোট কর্মীর ৩০ শতাংশই সেদেশে নারী। এছাড়া ১ লাখ ২৯ হাজার ৮০২ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন জর্দানে। ১ লাখ ২৬ হাজার ১ জন রয়েছেন, আরব আমিরাতে। লেবাননে ১ লাখ ৪ হাজার ২০৭ জন। ওমানে ৬৪ হাজার ৬০২ জন। এসব নারী অভিবাসীরা উল্লিখিত দেশগুলোতে গৃহকর্মী, হাসপাতাল, পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন কলকারখানায় কর্মরত।
প্রবাস থেকে কুমারী মেয়ে ফিরেছে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে
সংসারের আর্থিক অনটন কাটাতে মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন ভ্যানচালক বাবা। কিন্তু সেই মেয়ে বিদেশের মাটিতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কুমারী মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মে মাসের প্রথম দিকে দেশে ফিরেছে খালি হাতে। অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা খরচ এবং তার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারটি। সামাজিকভাবেও তারা বিপর্যস্ত। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ওই ভ্যানচালক, তার মেয়ে এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্থানীয় দালাল আবুল কাসেমের মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে জর্দানে যায় সদ্য কৈশোর পার হওয়া মেয়েটি। যাওয়ার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। মেয়েটি জানায়, জর্দানের রাজধানী আম্মানে বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করেছে খাওয়া চুক্তিতে। কোনো বেতন পায়নি। টেলিফোন না থাকা এবং বাড়ির মোবাইল ফোনের নম্বর ভুলে যাওয়ায় কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি। প্রায় ১০ মাস পর একটি মার্কেটে তার সঙ্গে পরিচয় হয় সিংগাইরের চরচামটা গ্রামের পপি ওরফে রাবেয়ার সঙ্গে। একই এলাকার মানুষ পেয়ে মেয়েটি সব কিছু খুলে বলে রাবেয়াকে। চাকরি দেয়ার কথা বলে রাবেয়া মেয়েটিকে তার সঙ্গে যেতে বলে। সেও রাজি হয়ে যায়। তাকে একটি দোতলা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিচতলায় দুটি ঘরে বাংলাদেশি, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কার আরো প্রায় ৩০ জন মেয়ে ছিল। বাংলাদেশি মেয়েদের কাছ থেকে জানতে পারে, তাদের দিয়ে যৌনবৃত্তি করানো হয়। রাবেয়ার মাধ্যমে খদ্দেররা যোগাযোগ করে। পছন্দের মেয়েকে খদ্দেরের কাছে পাঠিয়ে দেয় রাবেয়া। এ ছাড়া বাড়ির দোতলায় দুটি ঘরে ছুটির দিনে মদের আসর বসানো হয়। সেখানেও যৌনকর্মে বাধ্য করা হয় ওই মেয়েদের।
রাবেয়া প্রায় ১৫ বছর ধরে জর্দানে মেয়েদের দিয়ে দেহব্যবসা পরিচালনা করছে। জর্দানে রাবেয়ার আরেক নাম সোনিয়া। ওই বাড়িতে পৌঁছানোর দুই দিন পরই এই মেয়েটিকে এক খদ্দেরের কাছে যেতে বলে। রাজি না হওয়ায় বেদম মারধর করা হয়। বেশ কয়েক দিন নির্যাতনের পর একপর্যায়ে সেও বাধ্য হয়ে রাজি হয়। মেয়ের বাবা বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করে দেয়নি দালাল আবুল কাসেম। এ নিয়ে আমরা সিংগাইর থানায় মামলা করলে পুলিশ কাসেমকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে কাসেম জেলহাজতে রয়েছে। মেয়ে দেশে ফেরত আসার পর রাবেয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পারি।’
প্রবাসী নারী শ্রমিক ফেরতের স্রোত বাড়ছে
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই বিপুলসংখ্যক নারী বিদেশে পাড়ি জমান। এই নারীরা বিদেশে চাকরির ঝুঁকি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। সরকার তথা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছায় আর দালালের প্রলোভনে পড়েই তারা বিদেশ যেতে উদ্যোগী হন। কিন্তু বিদেশে গিয়ে এসব নারী চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিশেষ করে সৌদি আরবের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। ফলে এরই মধ্যে নারী অভিবাসনে ধস নামতে শুরু করেছে। চলছে দেশে ফেরার স্রোত।
বিএমইটির তথ্যমতে, ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত একা অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিককে অভিবাসনে বাধা দেয়া হলেও ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে তা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে। তবে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে যাওয়া নারীদের ওপর চলে সীমাহীন অত্যাচার, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। এমনকি তাদেরকে আটকে দেহব্যবসায় বাধ্য করার মতো মারাত্মক অপরাধও চালিয়ে আসছে সংঘবদ্ধ দালালচক্র। এর ফলে ২০১৬ সালে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা ব্যাপকহারে দেশে ফিরতে শুরু করেন। ওই বছর অভিবাসী নারীর সংখ্যা নেমে আসে ১৬ শতাংশে এবং ২০১৭ সালে ১৩ শতাংশে। আর চলতি বছরে নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার হার প্রথম দু’মাসে পূর্বের ন্যায় থাকলেও বর্তমানে একেবারেই কমে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বিদেশে নারী অভিবাসী শ্রমিকরা যৌনসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও বিশেষ কারণে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অনেক দরিদ্র পরিবারের নারী শ্রমিক দালালের খপ্পরে পড়ে বিনা টাকায় বিদেশ যাচ্ছেন। সেখানে দালালরা তাদের দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। এতে অধিকাংশ নারীই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তবে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ‘অবগত নন’ বলে দাবি করেছেন গণমাধ্যমকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায়, যদিও এ ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত হাস্যকর। একই সাথে কোনো সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় না দেয়ার ঘোষণা না দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুষ্টচক্রের হাত থেকে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’ কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক, তাদের পরিবার পরিজন এবং সচেতন মহল মন্ত্রীর একথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি। এর কারণ, মন্ত্রী নিজে এবং তার মন্ত্রণালয়ের লোকজনই এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ই মূলত এই নিরীহ নারীদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশের মাটিতে ঠেলে দিয়েছে।
দায়ীব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি
ক্ষতিগ্রস্ত নারী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে ক্ষতিপূরণ এবং বিদেশ থেকে ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের দাবিও তুলেছেন তারা। বিশেষ করে যারা যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন, সরকারিভাবে দেশে তাদের জন্য কর্মসংস্থান করে দেয়ার দাবি করেছেন। পাশাপাশি নতুন করে যাতে কোনো নারীকে বিদেশে পাঠিয়ে এমন নির্যাতন ও অনিশ্চয়তায় ফেলা না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের কষ্টের বিষয়টি অনুধাবন করবেন, মন্ত্রণালয়সহ দুষ্ট দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করবেন এবং আমাদের বেঁচে থাকার জন্য দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন- এটাই আমাদের দাবি।’ সৌদি ফেরত একাধিক নারী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এমনটাই বলেছেন। একই কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরাও। শ্রম অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর সাড়ে ১০ লাখ কর্মী বিদেশে প্রেরণ করার অন্তরালে দালালচক্রের মধ্যসত্ত্ব গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা বড় ব্যর্থতা।
এ প্রসঙ্গে একজন জনশক্তি বিশ্লেষক বলেন, ‘শুধু শারীরিক নয়, বাংলাদেশের নারী গৃহকর্মীদের ওপর চরম যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে দাসের মতো আচরণ করার অভিযোগও আমরা পাই। নির্যাতিতরা নানা কারণে তা প্রকাশ করেন না। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি রহস্যজনক কারণে আমলে নিচ্ছে না।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের দ্রুত এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে করণীয় ঠিক করা উচিত। যদি সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠাতেই হয় তাহলে তা সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) ভিত্তিতে নয়, সুনির্দিষ্ট চুক্তির অধীনে পাঠানো উচিত। যে চুক্তিতে বেতন, ক্ষতিপূরণ এ সব আইনগত অধিকারের বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট থাকবে। এছাড়া তাদের জন্য সুষ্ঠু নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতে হবে। যাতে কোনও রকমের নির্যাতনের শিকার তারা না হন। এমনকি বাংলাদেশ সরকারকে এ ব্যাপারে বিদেশের মাটিতে প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
(সাপ্তাহকি শীর্ষকাগজে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন