আর মাত্র একদিন পরেই তুরস্কের সমকালীন ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি, ক্ষীয়মান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মধ্য দিয়ে তুর্কি ভোটাররাও এই নির্বাচনে আরো গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ভবিষ্যতের মনকে রূপায়ণে ধর্মের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রূপান্তরিত হয়েছে।
সোমবার বিকেলে ইস্তাম্বুলের একটি বিশাল সমাবেশে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান তার সমর্থকদের কাছে ‘মুসলমানদের একটি ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তুলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট দীর্ঘসময় ধরে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে তুরস্ককে পুনর্নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে আসছেন। যদিও আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের কঠোর ধর্মনিরপেক্ষ উত্তরাধিকারীর এই প্রচেষ্টা বিশ্বের অনেক নেতাদের কাছে সরাসরি বিপরীত্য।
এই রূপান্তরের মধ্যে শিক্ষার অস্তিত্ব এবং এরদোগানের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রগুলির একটি তার ‘ইমাম হাটিপ’ প্রকল্প। এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেখানে ইসলামের অধ্যয়ন এবং পবিত্র কোরআন শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে।
এরদোগানের শাসনের অধীনে দেশটিতে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৪,৫০০টি এরকম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং প্রায়শই সারা দেশে নিয়মিত স্কুলগুলোকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে।
সর্বশেষ বাজেট প্রস্তাবে, তুর্কি সরকার ধর্মীয় শিক্ষার জন্য তহবিল ৬৮ শতাংশ বাড়ানোর জন্য অনুমোদন করেছে, যা বর্তমানে ১.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গড়ে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে যে অর্থ পেয়ে থাকে ধর্মনিরপেক্ষ স্কুলগুলো তার অর্ধেকেরও কর্ম অর্থ পাচ্ছে।
এছাড়াও, ইসলামের উপর জোর দিয়ে স্কুলের পাঠ্যক্রমসমূহ অবিচ্ছিন্নভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে ‘বিবর্তনের তত্ত্ব’ এখন থেকে আর পাবলিক স্কুলে পড়ানো হবে না। সরকারের মতে, শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অনুধাবন করা খুবই জটিল।
যদিও হাজারো ধর্মভীরু মুসলিমরা এরদোগানের এই শিক্ষা সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, কয়েক দশক ধরে ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের অধীনে নিপীড়নের বিরুদ্ধে এরদোগানের নীতি হচ্ছে সংশোধনমূলক।
অন্যদিকে, সেক্যুলারিস্টরা মনে করছেন, ধর্মীয় স্কুলগুলি তুরস্কের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। অনেক সেক্যুলারিস্ট বাবা-মা এই পরিবর্তনের প্রতিবাদ করছেন এবং তাদের সন্তানদের জন্য নতুন বিদ্যালয় খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
একটি চতুর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে রবিবারের নির্বাচনে এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং কাকতালীয়ভাবে ধর্মীয় স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক মোহাররেম ইনস প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তার প্রেসিডেন্সির অধীনে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে না।
তিনি বলেন, ‘যদি বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য আরো ধর্মীয় শিক্ষা চান, তবে তারা তা বেছে নিতে পারবেন, কিন্তু অন্য বাবা-মা’দের জন্য এটা জোরকরে চাপিয়ে দেয়া হবে না।’
এখন এটা দেখার বিষয় যে রবিবারের নির্বাচনে বাবা-মায়েরা তাদের শিশুদের জন্য কোন দিকটি বেছে নিচ্ছেন।
একাথিমেরিনি ডটকম অবলম্বনে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন