তুরস্কের ইজিয়ান উপকূলের ইজমির বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাফেতে হিজাব পরিহিত একদল ছাত্র-ছাত্রী খোশগল্প করছিলেন এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে শিক্ষকের লেকচার নোটগুলি দেখে নিচ্ছিলেন।
১৫ বছর আগে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ক্ষমতায় আসার আগে এই দৃশ্যটি অকল্পনীয় ছিল। তুরস্কের পুরোনো ধর্মনিরপেক্ষ নিয়ম অনুযায়ী ক্যাম্পাসে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
তুরস্কের অনেক শহরের মতো ইজমিরও এরদোগানের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বারা দৃশ্যত রূপান্তরিত হয়েছে। শহরের রাস্তাগুলোতে ইউরোপীয়-নির্মিত বিলাসবহুল ‘সেডান’ গাড়ির পাশাপাশি রাস্তাগুলোর পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বহুতল অফিস ভবন।
রবিবারের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা হিসাবে এরদোগান এসব অর্জনকে কৃতিত্ব হিসেবে প্রচার করছেন। কিন্তু একটি ডেমোক্রেটিক প্রাচীরের মধ্যে চলতে ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এক কারণে আসন্ন ভোট এরদোগানের জন্য অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে আর তা হচ্ছে দেশটির ক্রমবর্ধমান তরুণ ভোটাররা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেতে সবুজ ও হলুদ রঙের হিজাব পরিহিত এমেল বলেন, ‘আমরা আজকের জগতে বাস করি। সত্যি বলতে আমরা অর্থনৈতিক সমস্যায় আছি, যদিও এটি অনেক বছর আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল।’
তার বন্ধু বুরকু এতে সম্মতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা উন্নত দেশগুলো থেকে অনেক পিছিয়ে আছি।’
হিজাব পরিহিত রুয়াও বলেছেন যে তার মতো মানুষ রাজনীতি আর ধর্মীয় পোশাকের অধিকারে ঘুরপাক খাচ্ছে না। তিনি স্নাতকদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্বের হার এবং সামান্য যে চাকরির সুযোগ রয়েছে, সেখানে কম বেতনের বিষয়ে অভিযোগ করেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলা এড়াতে তারা তিনজনেই ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। যদি তারা আমেরিকাতে থাকত, তবে তাদের নাম প্রকাশে স্বাচ্ছন্দবোধ করত বলে জানান। দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ৭০ হাজার স্টুডেন্টকে আটক করা হয়েছে।
ইজমির হচ্ছে বিরোধী দলের একটি শক্তিশালী দূর্গ এবং এরদোগান রবিবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্পষ্টতই এগিয়ে আছেন। অধিকাংশ মতামত জরিপে দেখা গেছে, প্রথম রাউন্ডে জয়ের জন্য এরদোগান প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশের কম ভোট পাচ্ছেন। এছাড়াও, পার্লামেন্টেও প্রেসিডেন্টের একে পার্টি তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছেন বলে দেখানো হয়েছে।
ইজমিরের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, দেশব্যাপী অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের মতো একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক রাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মার্ট ইলদিজ’-এর মতে, তুরস্কের ২৫ বছরের নিচে যুবক-যুবতীদের চারভাগের একভাগ কেবল এরদোগানকে সমর্থন করবে।
‘ধার্মিক জেনারেশন’
প্রতিবছর দেশটিতে ১৮ বছর বয়সের ১০ লাখেরও বেশি ভোটার জাতীয় ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। যদিও, অন্যান্য দেশের মতো ভোট নিয়ে তুরস্কের বয়স্কদের তুলনায় তরুণদের আগ্রহ কিছুটা কম।
তবুও, এরদোগানের প্রতিদ্বন্দ্বিরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তরুণ ভোটাদেরকে চিহ্নিত করেছেন। প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে তাদের উদ্দেশ্যে একটি অ্যানিমেটেড ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এতে তরুণদের ভোটদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে এবং পার্টির প্রধান কেমাল কিলিকদারোগ্লু বুধবার রাতে একটি টিভি সাক্ষাত্কারে এই আবেদনের পুনরাবৃত্তি করেন।
জাতীয়তাবাদী ‘আইয়ি’ পার্টি ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট এবং ভাল চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৭০ হাজারের মতো। যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পারেননি, তারা অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রাম করছেন। তাদের প্রায় ৪০ শতাংশ বেকার রয়ে গেছে।
তুরস্কের যুবকদের ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি আকৃষ্ট করার এরদোগান একটি ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। হিজাকে তিনি এই প্রকল্পের কেন্দ্রীয় প্রতীকে পরিণত করেছেন।
কিন্তু ইলদিজ বলছেন যে কম বয়সী এবং সবচেয়ে শিক্ষিত ভোটাররা ‘ধর্মীয় পরিচয়ের নীতি ভেঙ্গে ফেলছেন’।
লেখক: অনোর আন্ট
ব্লুমবার্গ অবলম্বনে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন