ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে শনিবার থেকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরণের প্লাস্টিকের ব্যবহার। দোকান-বাজার-রেস্তোরাগুলিতে প্লাস্টিকের ব্যাগ বা বোতল অথবা থার্মোকলের বাসন, কোনও কিছুই আর ব্যবহার করা যাবে না। ধরা পড়লেই বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে।
ভারতের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারই প্রথম আইন করে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করলো। কাউকে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বহন করতে দেখলেই মোটা অঙ্কের জরিমানা ধার্য করেছে সরকার- প্রথমবারের জন্য ৫ হাজার আর দ্বিতীয়বারের জন্য ১০ হাজার টাকা। তারপরেও একই ব্যক্তি যদি প্লাস্টিক ব্যবহার করে ধরা পড়েন, তাহলে তিনমাসের জেল।
সারা রাজ্যেই কর্পোরেশন আর পৌরসভাগুলি অভিযান চালাতে শুরু করেছে। শুধু নাসিক, সোলাপুর আর পুনে শহর থেকেই জরিমানা বাবদ শনিবার আদায় হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। অনেক জায়গাতেই যেমন সাধারণ মানুষকেও জরিমানা করা হয়েছে, তবে মূল অভিযান চলেছে দোকান, শপিং মলগুলিতে।
সোলাপুর শহর কর্পোরেশনের হয়ে প্রথম দিনের অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লাইসেন্সিং বিভাগের প্রধান অনিরুধ কমলাকর আরাধ্যে। তিনি বলেন, 'অনেক দিন ধরে প্রচার চালানো হয়েছিল। তাই প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণের প্রথম দিন থেকে আর কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। মূলত দোকান শপিং মলগুলোতেই অভিযান চলেছে। প্লাস্টিক ব্যাগ বা থার্মোকল পেলেই জরিমানার রসিদ ধরানো হয়েছে। প্রায় এক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই কড়া না হলে তো কেউ ভয় পাবে না।'
অনিরুধ কমলাকর বলেন, 'সাধারণ মানুষদেরও জরিমানা করার কথা ছিল, তবে যাদের হাতে প্লাস্টিক ব্যাগ দেখা গেছে, প্রথম দিন বলে তাদের সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, জরিমানা আর করা হয়নি। পরের সপ্তাহ থেকে সেটাও শুরু হবে।'
মার্চ মাস থেকেই প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার আইন চালু হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। যদিও আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে তা কার্যকর করা যায়নি এতদিন। কিন্তু প্লাস্টিকের ওপরে অলিখিত নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই কয়মাসে মুম্বাইয়ের অনেক বাসিন্দাই তাই ধীরে ধীরে প্লাস্টিক বর্জন করার অভ্যাস করে ফেলেছেন।
এমনই একজন, মুম্বাইয়ের বাসিন্দা শ্রেয়সী ঘোষ। তিনি বলেন, 'মুম্বাইয়ের বীচগুলো দেখলে বোঝা যায় প্লাস্টিক দূষণ কী ভয়াবহ! বর্ষার সময়ে তো এইসব প্লাস্টিকই জমে গিয়ে ম্যানহোল, নালাগুলোকে আটকিয়ে দেয়। এটার খুব দরকার ছিল। প্রথম প্রথম সকলেরই অসুবিধা হয়েছে। এখন অনেকের মতো আমিও কাপড়ের থলি রাখি সঙ্গে। দোকান-বাজার থেকে জিনিসপত্র তাতেই আনি।'
প্লাস্টিক দূষণ যে কত ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, তা মুম্বাইয়ের বাসিন্দা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। প্লাস্টিক বর্জ্য জমে গিয়ে নালা এবং খালগুলি বন্ধ হয়ে গিয়ে মাঝে মাঝেই বর্ষার সময়ে গোটা শহরের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে, মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। এছাড়াও ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক জড়ো হয় সমুদ্র আর বীচগুলিতে।
শুধুমাত্র ভারসোভা বীচ থেকেই গত তিন বছরে ১৫ হাজার কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করেছেন আফরোজ শাহ আর তার সহযোগীরা।
আফরোজ শাহ বলেন, 'প্লাস্টিক বর্জ্য জমে গিয়ে নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে, এটা মানুষের কাছে একটা খুব সহজ যুক্তি। সেটা একটা সমস্যা ঠিকই, কিন্তু সামুদ্রিক প্রাণী, মাছ- এদের কতটা ক্ষতি হচ্ছে, সেটা কেন ভাববে না কেউ! একটা হিসাবে বলা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সমুদ্রগুলিতে যত মাছ পাওয়া যাবে, তার থেকে বশি ওজন দাঁড়াবে প্লাস্টিক বর্জ্যের। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে গেলে মানুষকেই ভাবতে হবে, বুঝতে হবে যে কীভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করবে তারা।'
শুধু আইন করে, শাস্তির বিধান দিয়ে তো আর মানুষের ভাবনা বদল করা যায় না, বলছিলেন প্লাস্টিক দূষণ বিরোধী অভিযানের স্বেচ্ছাসেবী আফরোজ শাহ।
কলকাতা, চেন্নাইসহ ভারতের নানা শহরেই এর আগে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে। প্রথম কিছুদিন কড়া নজরদারি থাকলেও তারপর থেকেই আবারও প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে- এমনটাই অভিজ্ঞতা নানা শহরে।
তাই পরিবেশ-কর্মীরা বলছেন, মহারাষ্ট্রের এই প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণ প্রক্রিয়া কতটা সফল, তা সময়ই বলবে। সূত্র: বিবিসি
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন