বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে দুর্ভাবনায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। প্রয়াত মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরণের মতোই সাদিককে শক্তিশালী প্রার্থী বলে মনে করছেন তারা।
৭৫ পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে বরিশালে বিএনপির ভালো করেছে। তবে ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির মধ্যে বিভক্তি, দলের একাধিক প্রার্থী আর এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগির সুযোগে জিতে যান আওয়ামী লীগের হীরন।
আর হীরন মেয়র হওয়ার পর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সাংগঠনিক কাজ বাড়ানোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেক বাড়ে, সেটি ২০১৩ সালের ভোটেই বুঝা যায়। এই নির্বাচনে হীরন হারলেও তিনি আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোট পান।
হীরনের মৃত্যুর পর বরিশাল আওয়ামী লীগকে গোছানোর কাজটি সবচেয়ে বেশি করেছেন সাদিক। তিনি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয়। তার বাবা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং শেখ হাসিনা সম্পর্কে মামাত-ফুপাত ভাই বোন। সেই হিসেবেও সাদিকের একটি গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব আছে বরিশালে।
আবার বিএনপির মেয়র আহসান হাবিব কামালের মেয়াদে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্তুষ্ট নয় খোদ বিএনপি। নগরবাসীর মধ্যেও অসন্তোষ স্পষ্ট। এই সুযোগটাও নিতে চাইছেন সাদিক।
তবে বিএনপি তাকে এবার প্রার্থী না করে সাবেক মেয়র এবং সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ারকে প্রার্থী করতে চাইছে বলে প্রচার আছে। তিনি যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, জিতেছেন প্রতিটিতেই। তার ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নাতীত। তিনি প্রার্থী হলে জমজমাট লড়াই হবে, এটা নিশ্চিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাদিককে নিয়ে সত্যি আমাদের মধ্যে টেনশন রয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে চিন্তিত। নতুন প্রার্থী হয়েও তার লোকজন ভালোই রয়েছে। কিন্তু এখানে সরোয়ার একটি ফ্যাক্ট। নির্বাচনে হার-জিত হবে অল্প ভোটের ব্যবধানে। দুইজনেই বর্তমানে জনপ্রিয়। তবে দল ক্ষমতায় থাকায় জোয়ারটা এখন সাদিকের দিকেই।’
বরিশাল জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘নিরপেক্ষ কথা বলতে গেলে সাদিক বিএনপির জন্য প্রেশার। কিন্তু বরিশালে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়াটাও মুখের কথা নয়। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলে অল্প কিছুর ব্যবধানে যেকোনো এক দল জয়ী হবে। তবে মজিবর রহমান সরোয়ার যদি প্রার্থী হন আর যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপি নিঃসন্দেহে জয়ী হবে।’
বরিশাল বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নুরুল আলম ফরিদ বলেন, ‘বরিশাল সিটি নির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে জয় ঠেকানোর কোনো উপায় নেই। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে সুষ্ঠু। আর যদি তা না হয় তাহলে আওয়ামী লীগ তো এমনিতেই জয় লাভ করবে।’
আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেন নেগাবান মন্টু বলেন, ‘বরিশালের জন্য তরুণ নেতৃত্ব দরকার। আর তরুণ নেতৃত্ব ছাড়া বরিশালের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর বিএনপির মেয়র থাকলে কী হয়, সেটি নগরবাসী গত পাঁচ বছর দেখেছে। আগের পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের মেয়রের কাজও মূল্যায়ন করবে জনগণ।
ভোটারদের ভাবনা
নগরীর অমৃত লাল দে সড়কের বাসিন্দা তরুণ ভোটার সুস্ময় সেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে সিটি করপোরেশনে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে কী উন্নয়ন হয় সেটা দেখেছি। তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়যুক্ত হলে কিছু উন্নয়ন হবে। আর বিএনপির প্রার্থী জয়ী হলে কিছু হবে না বরিশালের।’
বাংলা বাজার এলাকার আরেক ভোটার কলেজ ছাত্রী উম্মে জান্নাত মৃদুলা বলেন, ‘ভোট কেন্দ্রে যেতেই ভয় করছে। যে দুই প্রার্থীর নাম শুনলাম তারা তো নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করার লোক না। মনে হচ্ছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঝামেলা হবে।’
নথুল্লাবাদ এলাকার মিরাজ হোসেন বলেন, ‘সরোয়ার বরিশালের আলো, বাতাস ও মাটির সাথে মেশা মানুষ। নতুন কাউকে জনগণ কতটা ভোট দেবে এই নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের জয় হওয়াটা অনেকটা অস্বাভাবিক।’
বিএম কলেজের ছাত্র আকাশ দাস বলেন, ‘সরোয়ার অনেক পুরোনো নেতা বরিশালে। তবে সাদিক আব্দুল্লাহর পপুলারিটি এখন কম নয়। নির্বাচনে কী হয় বলা যাচ্ছে না। তবে এই নির্বাচনকে আকর্ষণীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ করতে সরকারের উচিত তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে জোরাল ব্যবস্থা নেয়া।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন