বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্রমেই আধিপত্য হারাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৭ শতাংশ আমদানি ব্যয় মেটানো হলেও ২০১৬ সালে তা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রফতানি আয় এসেছিল ১৮ শতাংশ। সেটাও কমে ২০১৬ সালে ১০ শতাংশে ঠেকেছে। এভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ক্রমেই অবস্থান হারাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ‘ট্রেড সার্ভিস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে এক কর্মশালায় গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০১১ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৬৪ শতাংশ আমদানি ব্যয় মেটালেও ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ শতাংশে। একইভাবে ২০১১ সালে দেশের মোট রফতানি আয়ের ৭১ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এলেও ২০১৬ সালে তা ৭৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে কর্মশালায় বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসেবায় আরো গতিশীলতা আনতে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
বিআইবিএমের গবেষণা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ও আন্ডার শিপমেন্ট, পণ্যের মিথ্যা বর্ণনা ও একাধিক ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বড় ধরনের অর্থ পাচার হচ্ছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধের নীতিমালাগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও এগুলো আরো উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। স্বীকৃত ব্যাংকগুলোকে আমদানি-রফতানি মূল্যের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন হতে হবে, যাতে এ উপায়ে অর্থ পাচার না হয়। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ছে।
ট্রেড সার্ভিসের মাধ্যমে কেউ যেন ঋণখেলাপি হতে না পারে, সেজন্য যথোপযুক্ত তথ্য সরবরাহের ওপর জোর দেয়া হয়েছে গবেষণায়। বিআইবিএমের মতে, এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচিত অধিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য এসব তথ্য যাচাই করা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো আধুনিক নীতিমালার প্রয়োজন।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী। তিনি বলেন, বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থ পাচার ক্রমেই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু অর্থ পাচার নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্যান্য আর্থিক অপরাধও ঘটছে। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর কড়া নজরদারি করছে। প্রতিদিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন তদারক করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাংকিং সেবা আরো উন্নত করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য নীতিমালার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এনেছে। আরো পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে অর্থ পাচার প্রতিরোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাহবুব উল আলম বলেন, আমাদের এখানে ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখনো উন্নত হয়নি। আন্তর্জাতিক ট্রেড সিস্টেমেও আমরা অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে।
কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসাইন, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ বারিকুল্লাহ। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন