অল্প জমি আর কম পানিতে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে জনপ্রিয় পদ্ধতি রি-সার্কুলেটিং অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম(আরএএস) প্রযুক্তি এখনো অপরিচিত বাংলাদেশে। মৎস্য গবেষকরা বলছেন, সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তিতে পুকুরের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব। তারা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন বাড়বে আমিষের যোগান, তেমনি সুযোগ বাড়বে রপ্তানির।
পুকুরের বদলে ১০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একেকটি চৌবাচ্চায় চলছে মাছ চাষ। বিশ্বের সর্বাধুনিক আরএএস পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিটি চৌবাচ্চায় এক সঙ্গে ১০ হাজার পোনা ছাড়া যায়। প্রতিটি চৌবাচ্চা পাইপ দিয়ে মেকানিক্যাল ফিল্টারে যুক্ত, যা কাজ করে মাছ ও মৎস্য খাদ্যের বর্জ্য পরিশোধনে।
এগ্রো থ্রি ফিশ হ্যাচারি অ্যান্ড কালচার ফার্ম এর সত্ত্বাধিকারী শামসুল আলম বাদল বলেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, এ্যামোনিয়া, নাইট্রেট এসমস্ত জিনিসকে ব্যালেন্স করে যে প্যারামিটারগুলো মাছের গ্রোথের জন্য ভালো, বায়োলজিক্যাল ফিল্টার থেকে সেগুলোকে মেইন্টেন করে পুনরায় পানিগুলি ট্যাঙ্কে ফেরত আসে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, আরএএস প্রযুক্তি আমদানি নির্ভর হওয়ায় এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে ৮টি চৌবাচ্চা স্থাপনে প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ হবে ৫০-৬০ লাখ টাকা। অপচয় হয় না বলে প্রতিটি চৌবাচ্চায় দিনে দু'বারে মাত্র ৪শ'-৭শ' গ্রাম খাবার দেয়া হয়। মাত্র সাড়ে তিন মাসে প্রতিটি চৌবাচ্চায় প্রায় এক টন মাছ উৎপাদন সম্ভব।
উদ্যোক্তারা বলেন, এক কেজি মাছ উৎপাদন করতে ১২৫ টাকা ব্যয় আছে। বিক্রয় মূল্য সাড়ে তিনশো টাকা সর্বনিম্ন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পুকুর কেটে বাড়ানো হচ্ছে মাছের চাষ। এতে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এ অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে আরএএস প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
উদ্যোক্তারা বলছেন, পুকুরে প্রতি কিউবিক মিটার পানিতে যেখানে ১-২ কেজি মাছ উৎপাদিত হয়। সেখানে আরএএস পদ্ধতিতে ৫০-৬০ মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। সেই হিসাবে ৭ শতাংশ জায়গার উপর অবস্থিত এই পুকুরে ৮টি চৌবাচ্চায় বছরে ১৫ টন মাছ উৎপাদিত হয়। কিন্তু আর আরএএস পদ্ধতি তুলনামূলক ব্যয়বহুল হওয়ায় উদ্যোক্তারা বলছেন বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার বাড়াতে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজন অধিকতর গবেষণা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন