গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতিগ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতি
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিনিময় শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ওই সমিতির ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সমিতি অফিসে গিয়ে কাউকে না পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পরে। অনেকেই সমিতিতে জমানো টাকা হারানোর আশঙ্কায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এঘটনায় কালিয়াকৈর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন ৪ জনের নাম উল্লেখ করে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে ওই সমিতির অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার প্রিয়া প্রিন্স সুপার মাকের্টের ৩য় তলায় শত শত লোকের ভিড়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত একটি বিশ্বস্ত সমবায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনিময় শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড। যার নিবন্ধন নং ৩৮৪ লেখা হয়েছে। কালিয়াকৈর উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায় ওই নাম্বারটি ভুয়া।
সংস্থার চেয়ারম্যান মোঃ ফারুকুল ইসলাম ফারুক ও এমডি মোঃ মিজানুর রহমান শুভ তালুকদার এমডি বলে অফিসে ভিজিটিং কার্ডে লেখা পাওয়া গেছে। গত ২/৩ মাস আগে ওই ভবনটি ওই সমিতির নামে ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম চালু করা হয়। তারা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারণা করে অল্প সুদে ঋণ দিবে ও সঞ্চয়ের লাভ দিবে বলে টাকা আদায় করতে থাকে। এ সময় প্রায় ১০/১২ জন কর্মচারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর টাকা কালেকশন করতে থাকে। দু’টি কক্ষ ২০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে ব্যাংকের মতো কাজ চালাতে থাকে।
মঙ্গলবার গ্রাহকদের সঞ্চয় ফেরত ও ঋণ বিতরণ করবে বলে গ্রাহকদের অফিসে আসতে বলে। গ্রাহকরা সকালে অফিসে গেলে ম্যানেজার সদস্যদের কাছ থেকে টাকা তুলে বিকেলে ঋণ প্রদান ও সঞ্চয় ফেরত দিবে বলে তাদের বসিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। কর্মকর্তারাও পালিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তাদের দেখা না পেয়ে সদস্যরা বিক্ষোভ করে। দু’টি কক্ষে চেয়ার-টেবিল আসবাবপত্র ও কিছু কাগজপত্র রয়েছে।
পরে স্থানীয়রা থানা পুলিশে খবর দিলে দুপুরে পুলিশ এসে গ্রাহকদের বুঝিয়ে শান্ত করে দু’টি রুমে তালা দিয়ে দেয়। সদস্যরা ওই সমিতিতে এক হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রেখেছে। প্রাথমিকভাকে গ্রাহকের টাকার পরিমাণ অর্ধকোটি টাকা হবে বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে আতাউর নামের এক গ্রাহক ৫০ হাজার, আলাল নামে ২৭ হাজার, জাহাঙ্গীর হোসেন ২১ হাজার, সুমন ৩০ হাজার টাকার পাশ বই নিয়ে অপেক্ষায় বসে রয়েছে।
গ্রাহক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, ওই সমিতিতে ৪৫ হাজার টাকা জমা করেছি। ৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা। কিন্তু দুপুরে অফিসে এসে দেখি কেউ নেই সবাই পালিয়েছে। এমন শত শত লোককে টাকা দিবে বলে আসতে বলেছে। এখন আরা কী করবো! ওই সমিতির কর্মকর্তারা প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিনিময় শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেড কর্মকর্তারা গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। ওই অফিসে কিছু আসবাবপত্র ছাড়া কিছুই নেই। গ্রাহকরা সকাল থেকে ঘুরছে কাউকে পাচ্ছে না। অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমবায় কর্মকতা মঙ্গলবার বিকেলে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
কালিয়াকৈর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন জানান, একটি অবৈধ সমবায় সমিতি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। পরে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলে কৌশলে তারা পালিয়ে যায়।
সংস্থার চেয়ারম্যান মোঃ ফারুকুল ইসলাম ফারুক ও এমডি মোঃ মিজানুর রহমান শুভ তালুকদার, ক্যাশিয়ার শামীম হোসেন এবং উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম বাদলকে আসামী করে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন