এবার নয়ছয় করে আমানতকারী ও ঋণ গ্রহীতাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক (এজিএম) সাইফুদ্দিন সবুজের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠার পর তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে ঘটনায় সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিদমন আইনে সদর মডেল থানায় মামলা করলে মামলাটি তদন্তের জন্য দুর্নীতিদমন কমিশন (দুদক) ময়মনসিংহ অঞ্চলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার রাতে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি খোন্দকার শওকত জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানের কথা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে সুরঙ্গ কেটে ১৬ কোটি টাকা চুরির ঘটনার পর এবার এ শাখার ম্যানেজার কর্তৃক বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় শহরবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এ ব্যাংক শাখায় লেনদেনকারীদের মাঝে। আমানতের খোজ-খবর নিতে আসা মানুষের ভিড় বাড়ছে।বেরিয়ে আসছে আত্মসাতের নতুন নতুন ঘটনা।আর এ অঙ্ক শেষ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে শহরের পুরান থানা এলাকার আমানতকারী ঠিকাদার আশিকুজ্জামান এলিনের ৪ লাখ ২০ হাজার, হারুয়া এলাকার ব্যবসায়ী জুলহাস সওদাগরের ৮০ হাজার,সাব্বির আহমেদের ২ লাখ টাকা, এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তার ৫ লাখ, এক সরকারি কর্মচারীর ২ লাখ ৫০ হাজার এবং শহরের হোসেনপুর রোড মোল্লা পাড়ায় অবস্থিত ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ক্ষুদ্র ঋণের ১০ লাখ টাকা ও জেলার পাকুন্দিয়ার পূর্বাচল হিমাগারের ১২ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, টাকা জমা দেয়ার কথা বলে সিল স্বাক্ষর সম্বলিত রশিদ প্রদানের পর জমা না দিয়ে আমানতকারীদের এবং চেক রেখে টাকা উঠিয়ে ঋণ গ্রহিতাদের এসব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজ।আর এসব ঋণের টাকা আত্মসাতে তাকে ওই ব্যাংকের দালাল হিসাবে পরিচিত বোরহান,মিলন,আলমগীর ও সোহেল নামে চার ব্যক্তি সহযোগিতা করেছেন বলে জানা গেছে।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা থেকে একটি অডিট টিম আসলে প্রথমে তাদের কাছে ধরা পড়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ও আত্মসাতের ঘটনা।এ ঘটনায় ইসমাইল হক নামে একজন প্রিন্সিপাল অফিসার পদ মর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম পাঠায় প্রধান কার্যালয়।একই সময় ম্যনেজার সাইফুদ্দিন সবুজকে প্রত্যাহার করে সোনালী ব্যাংক ময়মনসিংহের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। শনিবার পর্যন্ত এ তদন্ত টিমের সদস্যরা কিশোরগঞ্জে অবস্থান করছিলেন।তাদের উপস্থিতিতে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন শাখা ম্যানেজারের কাছে আসছে টাকা আত্মসাতের একের পর এক অভিযোগ।
এ ব্যাপারে কথা হলে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) নূর মোহাম্মদ যুগান্তরকে জানান, তিনি নিজে বাদি হয়ে ১৯ অক্টোবর দুইজন গ্রাহকের নামোল্লেখ করে তাদের ৫ লাখ টাকা জামানত খোয়া যাওয়ার বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন।এছাড়া মামলার এজাহারে বলা হয় পরবর্তীতে আরও যে সব তছরুপের অভিযোগ আসবে বা পাওয়া যাবে সেসবও এ মামলার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
অভিযোগের বিষয় দুর্নীতিদমন দুদকের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় ২০ অক্টোবর মামলাটি এফআইআর করে কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ দুদকে পাঠিয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, মামলা দায়েরের পর থেকে অভিযুক্ত ম্যানেজার সাইফুদ্দিন সবুজ আত্মগোপন করেছেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন