নিয়োগ জটিলতা থাকায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ ও বিচারাধীন রয়েছে—এমন রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংকের ছয় হাজারেরও বেশি পদে নিয়োগ আটকে আছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি নিয়ে মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকায় তাদের হাত-পা বাঁধা, এখানে কিছু করার নেই। নিয়োগপ্রার্থীরা বলছেন, তাঁরা অনেক অপেক্ষা করেছেন। বেকারত্ব সমস্যার সমাধানে ব্যাংকের চূড়ান্ত নিয়োগ হওয়া একান্ত জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ব্যাংকে সমন্বিত নিয়োগ পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) গঠিত হয়। এরপর সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে ৬৮৬ জন, অফিসার পদে ৮১০ জন, অফিসার (ক্যাশ) পদে ৭৪৮ জন, জনতা ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে ৮৩৪ জন, অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ পদে ৪৬৪ জন, অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ (টেলর) পদে ৫৩৬ জন এবং রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে ৪২৩ জন, অফিসার পদে ৭৩৬ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। মোট ৫ হাজার ২৩৭টি পদের নিয়োগ এখন আদালতে বিচারাধীন। এটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সুরাহা হয়নি।
এ ছাড়া বিএসসি গঠনের আগে জনতা ব্যাংকের ২০১৪ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ পদে ১৫৪ জন, অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ (টেলর) ৪৯৪ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। একই বছর সোনালী ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) ৭২৫, অফিসার পদে ৫৪৭ এবং সিনিয়র অফিসার ৪৩৫ জন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায়। সোনালী ব্যাংকের এই তিন পদে মোট ১ হাজার ৭০৭ জনের নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেক দূর এগোয়। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ২১ জুন সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ৪৩৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রূপালি ব্যাংকে ২০১৩ সালে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে সেখানে পদের সংখ্যা লেখা ছিল না। নিয়োগ জটিলতা থাকার কারণে এই তিনটি ব্যাংকের নিয়োগ আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) প্রধান মোশাররফ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আটকে থাকা ব্যাংকের নিয়োগ নিয়ে আমাদের কোনো মতামত নেই। কেননা, আমরা আদালতের আদেশের বাইরে যেতে পারি না। তবে চাই এসব সমস্যার সমাধান হোক। ব্যাংকে নিয়োগ হলে জনবল-সংকট হবে না। ব্যাংকের কাজে গতি আসবে।’
যাঁরা ব্যাংকের নিয়োগের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাঁরা সবাই কোনো না কোনো নিয়োগে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। তাঁদের চূড়ান্ত নিয়োগ না দিয়ে বঞ্চিত করা হচ্ছে—এমন অভিযোগে এনে নতুন নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন।
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পর একটি বঞ্চিতপক্ষের প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। তাঁরা ২০১৪ সাল বা তার পরে কোনো না কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মামলার কারণে নতুন নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। নতুন নিয়োগ না হওয়ার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকগুলোয় জনবল-সংকট দেখা দিয়েছে।
মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ আটকে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দেয় জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে তিন বছর পার হয়ে গেছে। প্রার্থীদের ৮০ শতাংশের চাকরির বয়সও চলে গেছে। নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের দাবি, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যেন ২০১৬ সালের সার্কুলারের সব নিয়োগ সম্পন্ন করে, যাতে ২০১৭ সালের সমন্বিত নিয়োগ বাস্তবায়ন করে।
নিয়োগ আটকে থাকা একাধিক প্রার্থী প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের চাকরির বয়স চলে যাচ্ছে, কিন্তু ব্যাংকগুলো আটকে থাকা নিয়োগের বিষয়ে কিছু করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় আগের নিয়োগের সমাধান করেনি, তাই ওই ব্যাংকগুলোয় নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেই সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নিয়োগ বন্ধ করে দেন। তাই তাঁদের আগের পুরোনো সমস্যা সমাধান করতে হবে। না হলে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবী নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তাঁদের একজন নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আদালতে বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ তবে এ নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যা দ্রুত সমাধান চান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন