তীব্র বিরোধিতা ব্যবসায়ীদেরতীব্র বিরোধিতা ব্যবসায়ীদের
আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের যে প্রবৃদ্ধি, তাতে প্রতি বছর অন্তত দুটি নতুন জেটির চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। যদিও গত ১০ বছরে একটি জেটিও স্থাপন করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে জেটিতে কনটেইনার জাহাজের জট এখন প্রায় নিয়মিত দৃশ্য। ইয়ার্ডেও উপচে পড়া কনটেইনার। আমদানি-রফতানি সহজ করার এসব মৌলিক কাজ উপেক্ষিত রেখেই ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ঝুঁকেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। যদিও চট্টগ্রাম বন্দরের এ উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৭ শতাংশ। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের উচিত, দেশের অর্থনীতির স্বার্থ সামনে রেখে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী হওয়া। একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকিং কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে মোটেই প্রত্যাশিত নয়।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের সংগঠন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল হক এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যাংক প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আজগুবি ব্যাপার। বন্দর একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। বন্দরের পরিকল্পনা হবে, কীভাবে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা যায় সেটা। যার যে কাজ, সেটাই তাকে করতে হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৯ সালের মধ্যে প্রধান এ সমুদ্রবন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের যে চাহিদা থাকবে, সে সক্ষমতা নেই চট্টগ্রাম বন্দরের। নতুন টার্মিনাল-জেটি নির্মাণের ব্যাপারে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের যে প্রস্তুতি রয়েছে, তাতে দুই বছর পর এ অতিরিক্ত চাপ সামাল দেয়া নিয়ে এমনিতে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ২০১৯ সালে শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরে যে অবকাঠামো দরকার হবে, তা তারা ২০১৬ সালের মধ্যে শেষ করে ফেলেছে। অথচ ২০১৭ সালে এসে চট্টগ্রাম বন্দর এখনো অবকাঠামোগত দিক থেকে রয়ে গেছে ২০০৫ সালে। আমদানি ব্যয় বাড়ায় ব্যবসায়ীরা তা যুক্ত করতে বাধ্য হচ্ছেন পণ্যের মূল্যে। এমন একটা সময়ে নিজের আসল কাজে মনোযোগী না হয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কীভাবে দেখে চট্টগ্রাম বন্দর? ব্যাংক প্রতিষ্ঠা মোটেই একটি বন্দরের কাজ হতে পারে না। বন্দরের নিজের কাজ হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা।
প্রস্তাবিত ব্যাংকের ধরন কী হবে, সে সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবনা এরই মধ্যে তৈরি করেছে বন্দরের এ-সংক্রান্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাস্ট ব্যাংকের আদলে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক হবে এটি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলেও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এটি ব্যাংকিং কোম্পানি হিসেবে পৃথক সত্তা লাভ করতে পারে। এর বেশির ভাগ শেয়ারের মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে।
যদিও বিদ্যমান চবক অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে না। অথরিটি ফান্ড কীভাবে গঠিত ও বিনিয়োগ করা যাবে, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চবক বিনিয়োগ নীতিমালায়। সেখানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠনের কোনো উল্লেখ নেই। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তাই চবক অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ সংশোধনের প্রয়োজন হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ডসভায় উত্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ব্যাংক প্রতিষ্ঠার এ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একমত নন বন্দরেরই অনেক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ৪০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন রাখতে হবে। প্রারম্ভিক বিনিয়োগের পর মুনাফা অর্জনে অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বলেন, ‘ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারার মতো প্রয়োজনীয় মূলধন আমাদের রয়েছে। আমাদের এখন ফিন্যান্সিয়াল কনসালট্যান্ট নিয়োগ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা অনেক সময় পুরো বিষয়টি না বুঝেই মন্তব্য করেন। আমরা যদি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তা হবে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই। বন্দরে ২৪ ঘণ্টা অপারেশন কার্যক্রম খোলা রাখতে হয়। কিন্তু বন্ধের দিনগুলোয় ব্যাংক খোলা থাকে না। অনেক সময় পে-অর্ডার করতেও সমস্যা হয়। এ ধরনের উদ্যোগে বন্দরে যারা কর্মরত, তারা এখানে বিশেষ সুবিধা পাবেন। আইন-কানুনের ব্যাপারটিও আমরা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আইনের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে এ ধরনের কাজ এগিয়ে নেব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন