আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় ঋণ বিতরণের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড গত বছর বেশ কয়েকবার এই সীমা লঙ্ঘণ করেছে।
সীমা লঙ্ঘনের জন্য গ্রাহককেই দায়ী করেছে ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া এই সীমার কারণে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস পড়ে থাকে বলে তাদের ক্ষেত্রে সীমাটি শিথিলের দাবি জানিয়েছে ব্যাংকটি।
আজ সোমবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরার সময় এসব মন্তব্য করেন ব্যাংকটির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা।
নির্ধারিত সীমার বাইরে বেশি ঋণ বিতরণ করায় গত বছরের শেষের দিকে ব্যাংকটিকে সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই আগ্রাসী ঋণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ‘আগ্রাসী ব্যাংকিং করা হয়নি। ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত আমানতের ৮৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আমরা নিয়ম মেনেই ব্যাংকিং করছি। অন্য ব্যাংকগুলো কত নিয়ম ভঙ্গ করছে। তবে তাদের কোনো দোষ দেওয়া হচ্ছে না। পান থেকে চুন খসলে সব ইসলামী ব্যাংকের দোষ।’
ব্যাংকের অপর পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন বলেন, ‘আমরা যখন ঋণ দিয়েছি তখন আইনি সীমার মধ্যেই ছিল। কিন্তু আমাদের একজন বড় গ্রাহক তার আমানতের টাকা তুলে নেয়ায় এডিআরে ঋণসীমা অতিক্রম করে। একজন গ্রাহক তার আমানত তুলে নিলে আমাদের কিছু করার থাকে না। এসব বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখা উচিত।’
আবদুল মতিন আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণের সীমা বাড়ানো উচিত। এই ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ আমানত রয়েছে। আইনী সীমাবদ্ধতার কারণে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে থাকে। এই বিপুল পরিমাণ অলস টাকা বিনিয়োগ করতে পারলে ব্যাংকের আয় আরও বাড়তো। তাই আমাদের ক্ষেত্রে এই সীমা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল হামিদ মিঞা বলেন, ‘আমাদের ঋণ আমানত অনুপাত (আইডিআর) সব সময় আইনি সীমা ৯০ শতাংশের নিচে রয়েছে। অর্থাৎ ৮৭ কাছাকাছি আছে। সম্প্রতি এটা কিছুটা বেড়েছিল। ৯০ দশমিক এক শতাংশ হয়েছিল। তবে আমাদের কোনো তারল্য সংকট নেই; আগামীতেও হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় সাত হাজার ২৪৪ কোটি টাকা বেশি। একই সময়ে আট হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগসহ মোট সাধারণ বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। আমানত বেড়েছে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ঋণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ।
গত বছর আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আহরণ বাণিজ্য করেছে যথাক্রমে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি, ২৪ হাজার কোটি এবং ২৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
চলতি বছর সম্পর্কে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং প্রসার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরাস্তু খান আরও বলেন, চলতি বছরেই নির্বাচন হবে। তাই আগামী মুদ্রানীতিতে মূল্যষ্ফীতির ওপর জোর দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে নির্বাচনী বছরে তারল্য প্রবাহ বেড়ে যায়। তাই কিছুটা তারল্য সংকট হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান, ডাইরেক্টর মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব-উল-আলম উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন