সাতক্ষীরায় গত বছরের এ সময়ে বাজারে এক কেজি ওজনের একটি রুইয়ের দাম ছিল ২৩০-২৪০ টাকা। দেড়-দুই কেজি ওজনের কাতলার দাম ছিল ২৫০ টাকার মতো। অথচ চলতি মৌসুমে একই ওজনের রুই বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ ও কাতলা ১৩০ টাকায়। একইভাবে দাম কমে গেছে মৃগেলেরও। এ অবস্থায় ভালো উৎপাদন করেও লোকসানের মুখে পড়েছেন জেলার ৫০-৬০ হাজার সাদা (দেশী কার্পজাতীয়) মাছচাষীর।
সাতক্ষীরা জেলা মত্স্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী জেলার সাত উপজেলায় প্রায় এক লাখ টন সাদা মাছ উৎপাদন হয়। তবে বেসরকারি হিসাবে এর পরিমাণ আরো বেশি। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, ব্লাককার্প, গ্রাসকার্প, পাঙ্গাশ, কই, মাগুর, মনোসেক্স তেলাপিয়া উল্লেখযোগ্য।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় নিবন্ধিত ৪৯ হাজার ১৬৩টি ঘেরে সাদা মাছ চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ১০৫টি, তালায় ১ হাজার ২৯৫টি, দেবহাটায় ২ হাজার ৮২৯টি, আশাশুনিতে ১৩ হাজার ২১৭টি, কালীগঞ্জে ১৪ হাজার ৫৫৯টি, শ্যামনগরে ১৩ হাজার ১৫৮টি ও কলারোয়াতে ২ হাজার ঘের রয়েছে। সবমিলে জেলার সাত উপজেলায় মোট ৬১ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমিতে এ মাছ চাষ হয়েছে। আর সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে জেলায় সাদা মাছের উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯১ হাজার ৮০০ টন, যা গত মৌসুম থেকে ৫ হাজার টন বেশি।
জেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চল সব ধরনের মাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। কয়েক বছর ধরে জেলার চাষীরা ঘেরে চিংড়ির সঙ্গে সাদা মাছ চাষ করছেন। তাছাড়া আলাদাভাবেও সাদা মাছ উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে সাদা মাছের উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। আর চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেশি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না চাষীরা।
সদর উপজেলার বদ্দিপুর গ্রামের মাছচাষী আব্দুল গফুর জানান, চলতি মৌসুমে ৮০ বিঘার একটি ঘেরে মাদা মাছ চাষ করেছেন। মাছের পোনা, খাবার, পরিচর্যা ও জমি লিজের টাকাসহ প্রতি কেজি মাছ উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৭০-১৮০ টাকা। কিন্তু বাজারে মাছের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। ফলে চলতি মৌসুমে তার ১৪-১৫ লাখ টাকা লোকসান হবে বলে আশঙ্কা করছেন।
কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ভাড়ুখালী গ্রামের মাছ চাষি রাজিব হোসেনও। তিনি জানান, ৬০ বিঘা জমিতে মিশ্র কার্পজাতীয় মাছ চাষ করেছেন। মৌসুমের শুরুতে প্রথম দফায় বাজারে মাছ বিক্রি করে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই ঘেরের প্রায় ৫০ শতাংশ মাছ রেখে দিয়েছেন, পরে বিক্রির জন্য। তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন সাদা মাছের যে দাম তাতে ঘেরের সব মাছ বিক্রি করলে ৬-৭ লাখ টাকা হবে।’
সাতক্ষীরা জেলা মত্স্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, ‘চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে প্রচুর পরিমাণ সাদা মাছ উঠছে। তবে সে তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। চাহিদার থেকে সরবরাহ কয়েক গুণ বেশি হওয়াতেই চাষীরা মাছের দাম পাচ্ছেন না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন