ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের জমা করা অর্থ সুরক্ষা দিতে ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন-২০০০’ সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধিত আইনে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে বীমা করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে। কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বীমা না করলে আমানত সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো প্রতিষ্ঠান আমানতের বিপরীতে বীমার প্রিমিয়াম জমা দিতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের (বন্ধ) সুপারিশ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন-২০০০’ সংশোধন করে এর নাম রাখা হয়েছে ‘আমানত সুরক্ষা আইন-২০১৭’। আগের আইনে শুধু ব্যাংক গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে বীমা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। সংশোধিত আইনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় জমা করা আমানতের বিপরীতে বীমা করতে হবে। দেশে বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংক ও ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোয় সর্বমোট ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা আমানত জমা রয়েছে। গত বছর জুন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় জমা ছিল ৪১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
সংশোধিত আইনের খসড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে এটি চূড়ান্ত করা হবে। এর পর এটি আইন হিসেবে জারি করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে সরকার এটি আইন হিসেবে জারি করবে। আগের আইনে সব বিধিবিধান বহাল রাখা হচ্ছে। তবে কয়েকটি বিষয় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আগে সব বিধিবিধান শুধু ব্যাংকগুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল। নতুন আইনের বিধিবিধান ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত হারে বীমার প্রিমিয়াম করতে হবে। নতুন আইনে বলা হয়েছেÑ পর পর দুইবার কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম জমা দিতে ব্যর্থ হলে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমানত গ্রহণ বন্ধ করতে নির্দেশ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের আইনে একাধিকবার ব্যর্থ হলে এই বিধান প্রযোজ্য ছিল। এ ছাড়া দুইবারের বেশি ব্যর্থ হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের সুপারিশ করবে আইনের মাধ্যমে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড। আইনে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম জমা দিতে ব্যর্থ হলে প্রিমিয়ামের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংরক্ষিত হিসাব থেকে ওই অর্থ কেটে রাখা হবে। দেরির জন্য ব্যাংক রেট অনুযায়ী দ- সুদও আরোপ করা যাবে।
কোনো কারণে কোনো একটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও (অবসায়ন) আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে এই আইনের আওতায়। আমানতকারীদের জমা করা আমানতের মধ্যে বীমার সমপরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। সরকারের অনুমোদন নিয়ে পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল থেকে দেবে। অবসায়নের ৯০ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করা হবে। একাধিক হিসাব থাকলে একত্রিত করে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা তহবিল থেকে দেওয়া হবে। তবে তহবিলে আমানতকারীর পাওনার তুলনায় কম অর্থ থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংক রেটে অর্থ কর্জ করে তা পরিশোধ করবে সরকার। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছে ব্যাংকের কোনো পাওনা থাকলে তা-ও সমন্বয় করা হবে।
আমানতের সুরক্ষায় গত বছর জুন পর্যন্ত আমানত বীমা ট্রাস্টে ফান্ডের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১০ কোটি টাকা। ব্যাংকের আমানত বীমা প্রিমিয়াম গ্রহণ করা হয় ষাণ¥াষিক ভিত্তিতে। বাংকের ঝুঁকি বিবেচনায় প্রিমিয়ামের হার নির্ধারণ করা হয়। প্রবলেম ব্যাংকগুলোকে দশমিক ১০ শতাংশ, আরলি ওয়ার্নিংভুক্ত ব্যাংককে দশমিক ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্যাংককে দশমিক ৮ শতাংশ প্রিমিয়াম দিতে হয়। তহবিলের টাকা পাঁচ ও দশ বছরমেয়াদী ট্রেজারি বিলে এবং স্বল্পমেয়াদে রেপো খাতে বিনিয়োগ করা হয়।
নতুন আইনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনে বেশকিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে খসড়া আইনটি। প্রাপ্ত মতামতগুলো পর্যালোচনা করে আইনটি চূড়ান্ত করে তা পাসের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন