বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের বড় একটি টেন্ডারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ভারত ও চীন। দক্ষিণ এশিয়ার এ দুটি দেশ এ অঞ্চলে কৌশলগত প্রভাব খাটানো নিয়ে লড়াই করছে দীর্ঘদিন। খবর রটেছে বাংলাদেশের ওই শেয়ার ভারত যে দাম দিতে চেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি দাম হাঁকিয়েছে চীন। চীনের প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়েও গিয়েছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের আর্থিক নিয়ন্ত্রকরা। এতে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে।
বলা হচ্ছে, ভারতের প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে আরো বলা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নির্বাহী প্রধান মাজেদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, ১৮০ কোটি শেয়ারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে এ মাসে মোট শেয়ারের শতকরা ২৫ ভাগ কিনে নিতে চেয়েছে ভারত। তারা প্রতিটি শেয়ারের দাম হাঁকিয়েছে ১৫ টাকা করে। এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেছে চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। তারা প্রতিটি শেয়ারের দাম হাঁকিয়েছে ২২ টাকা করে। যৌথভাবে এ দুটি কোম্পানি এই সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়েছে। পাশাপাশি তারা টেকনিক্যাল সাপোর্ট হিসেবে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার প্রস্তাব করেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, চীনের দরটি অনুমোদন করেছে বোর্ড। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক নিয়ন্ত্রকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ জোরালো হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, চীনের ওই দরকে আর সামনে এগুতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারা ডিএসই’কে এ প্রক্রিয়াটিকে আরো যাচাই বাছাই করতে বলেছে। তবে চীনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেছেন, ঢাকা স্টক এক্সজেঞ্জের সিদ্ধান্ত তারা এড়িয়ে যেতে পারেন সব সময়ই। তিনি আরো বলেছেন, এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি। এখনও প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ওদিকে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ এসেছে। বলা হয়েছে, ভারতের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানো হচ্ছে। চীন যে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছে তার চেয়ে অনেক কম দাম হাঁকিয়েছে মুম্বইভিত্তিক স্টক এক্সচেঞ্জ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই দরপত্র নিয়ে বাংলাদেশে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ও প্রভাবশালী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তার বাইরে এসে বাংলাদেশ চীনের প্রতি ক্রমবর্ধমান হারে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নয়া দিল্লি তার সমর্থন দিয়েছিল বাংলাদেশকে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে ওই নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওদিকে বাংলাদেশে বড় অংকের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাঙলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে শত শত কোটি টাকার লোভনীয় বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। কিন্তু ভারত ক্রমাগত চাইছে চীনকে টেক্কা দিতে। এরই মধ্যে ভারতের ঘোর বৈরি পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে চীন। তারা সম্পর্ক গড়ে তুলেছে ভারতীয় মহাসাগরীয় দেশ শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ সহ আরো কিছু দেশের সঙ্গে। তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম চীনা কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছেন সি জিনপিং। তিনি ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকায় অবতরণ করে ২০০০ কোটি ডলারেও বেশি অর্থমূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তবুও বাধা আছে। গত মাসে বাংলাদেশী একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করায় চীনের একটি শীর্ষ স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন