বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে বৈদেশিক বাণিজ্যে জালিয়াতির মহোৎসব চলছে। ব্যাংকটির প্রধান শাখা (দিলকুশায় অবস্থিত) রফতানি প্রণোদনা ও রাজস্ব ফাঁকিসহ বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতিতে রেকর্ড গড়েছে।
শাখাটির ব্যাপক জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকটির উচ্চ পর্যায়ের সিন্ডিকেট জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালিত পরিদর্শনে এসব চাঞ্চল্যকর অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে রফতানির অর্থ দেশে না এলেও মিথ্যা ছাড়পত্র দিয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
এ সুবাধে সরকারি তহবিলের বিপুল অঙ্কের প্রণোদনা বেহাত হয়ে গেছে। এভাবে ইতিমধ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচারও হয়েছে। কেননা রফতানির যে অর্থ দেশে আসেনি সেটি নির্ঘাত পাচার হিসেবে গণ্য হবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, এসব ভয়াবহ জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকটির এমডি কাজী মসিহুর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িত। বলা হচ্ছে, তিনি ব্যাংকটির মধ্যে এক রকম একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন। তার কথার বাইরে কিছুই হয় না। এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে ব্যাংকটি ইতিমধ্যে তার ঋণসীমা অতিক্রম করেছে। যদিও এ বিষয়ে কেউ তথ্য দিতে নারাজ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, রফতানিমূল্যের এক টাকা বকেয়া থাকা অবস্থায় প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ নেই। তবুও তারা নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রণোদনা দিয়েছে। এক্ষেত্রে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার শফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রফতানিমূল্য দেশে না এলে প্রণোদনা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি দিয়ে থাকে তবে স্পষ্ট জালিয়াতি করেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তা ও গ্রাহকের যোগসাজশ থাকতে পারে।
এদিকে জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী মসিহুর রহমান। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘একদম সঠিকভাবে কেউ ব্যবসা করতে পারেন না।
এটা সব ব্যাংক কমবেশি করে থাকে। ইতিমধ্যে শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ এ সময় সেখানে ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মতিউল হাসান ও কামরুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
মতিউল হাসান দাবি করেন, ‘রফতানির সব বিল বাকি ছিল না, কিছু বিল বকেয়া থাকা অবস্থায় প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এটা সবাই দেয়। না হয় ব্যবসা চালানো যাবে না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনে বলা আছে একটি বিল বকেয়া থাকলেও প্রণোদনা দেয়া যাবে না।’
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান শাখা ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, রফতানির কিছু বিল বকেয়া ছিল। এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখায় পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অঙ্কের রফতানির বিপরীতে স্পষ্ট জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি তহবিল থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার রফতানি প্রণোদনা দেয়া হয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৮২ ডলার রফতানিমূল্য বকেয়া থাকার পরও চার প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অঙ্কের প্রণোদনা দেয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন