রোজা শুরুর কদিন আগে থেকে ঢাকার বাজারে পেঁয়াজ, চিনি ও গরুর গোস্ত, মুরগির দাম বাড়ছিল, এখন চড়েছে সবজির দামও। অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বিভিন্ন সবজির দর, ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। একলাফে বেগুন ৪০ টাকা থেকে ১০০টাকায় পৌঁছেছে।
রোজা উপলক্ষে ঢাকার জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে তদারকি শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসএসসি) মেয়র সাঈদ খোকন। তবে এই তদারকির মধ্যেই কয়েকটি পণ্যের দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়েছে বলে কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করেছেন।
রোজা শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুর-২ নম্বর এলাকার বড়বাগ কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ৭০ টাকা, পটল, ঢেঁড়শ, পেঁপে ৬০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর রাজধানীতে গরুর গোস্ত বিক্রি হচ্ছে ৫২০টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি। যদিও ডিএসএসসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ৪৫০টাকা গরুর গোস্তের কেজি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে মেয়রের এ কথার সঙ্গে গোস্তের বাজারের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে ক্ষুব্ধ রাজধানীবাসী।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দুল, শসা, করলা ও টমেটো সব সবজির দামই প্রতিকেজি ৬০ টাকা বলে জানান বিক্রেতারা। অথচ গত শুক্রবার বড়বাগ বাজারে পটল ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
হাতিরপুলের সবজি বিক্রেতা সোলায়মান বলেন, “রোজাকে সামনে রেখে কারওয়ান বাজারের পাইকারি হাটে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। অধিকাংশ সবজিই পাইকারিতে প্রতিকেজি ৫০ টাকা করে কিনতে হচ্ছে।”
সোলায়মান পণ্যের এই দাম যখন বলছিলেন, তখনই পাশ দিয়ে ডিএসসিসির বাজার ‘মনিটরিং টিম’ কাজ করছিল।
এক সপ্তাহ আগেই মুরগির দাম বেড়ে গিয়েছিল। তা আরও বেড়েছে। ঢাকার বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬৫ টাকা। একইভাবে লেয়ার মুরগির দাম উঠেছে প্রতি কেজি ২০০ টাকা, দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।
হাতিরপুলের মুরগি বিক্রেতা দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, “কাপ্তান বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৪৮ টাকা দরে পাইকারি কিনেছি। যাবতীয় খরচসহ এখন ১৬৫ টাকার কমে বিক্রির সুযোগ নেই।”
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসেবে গত এক সপ্তাহে ঢাকার বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে।
চিনি কেজিতে দুই টাকা বাড়লেও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে টিসিবি জানিয়েছে।
তবে বড়বাগের সালাউদ্দিন জেনারেল স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, চিনির সঙ্গে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে।
গত সপ্তাহে চিনির পাইকারি দাম ৫০ কেজির বস্তা ২৬০০ টাকা ছিল, তা বেড়ে ২৭৭০ টাকায় উঠেছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৪ টাকায়।
মাছের বাজারও চড়া। বাজারে রুই মাছের কেজি মানভেদে আড়াইশ থেকে সাড়ে ৩শ, কাতল মাছ সাড়ে ৩শ, মাঝারি আকারের বাগদা ও গলদা চিংড়ির কেজি সাড় ৪শ টাকা থেকে ৫শ’ টাকা, মাগুর মাছ ৪৫০-৭০০ টাকা ও শিং মাছ ৫শ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছিল বড়বাগে।
বেগুনের দাম ১০০ টাকা!
রাজধানীর কাঁচাবাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। রোজা শুরুর আগে থেকেই ধাপে ধাপে বাড়ছে বেগুনের দাম। গতকাল বেগুনের দাম ছিল ১০০ টাকা। আরও বেশ কিছু সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর শাহআলী, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর টাউন হল, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পণ্যের কেনাবেচা কয়েক গুণ বেড়েছে। ইফতারের অন্যতম উপকরণ লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ১০০ ও গোল বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। দু'দিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আগের সপ্তাহে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম দ্বিগুণের বেশি। মিরপুর আনসার ক্যাম্প বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাহীন বলেন, বেগুনের চাহিদা বেড়েছে, তাই দাম বাড়ছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে গেলে দাম বাড়ে
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় দাম কিছুটা কমলেও আগে-পরে বাড়তি দামেই সবজি বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের বড় দুই কাঁচা বাজারে।
বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রিয়াজ উদ্দিন বাজারে অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানের সময় বিক্রেতারা পণ্যের কম দাম বললেও ভ্রাম্যমাণ চলে যাওয়ার পর আবার আগের দাম দাবি করেন তারা। অন্যদিকে রিয়াজ উদ্দিন বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বের কাজীর দেউড়ি বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছিল সব সবজি।
অভিযানের শুরুতে মূল্য তালিকা না থাকায় আর রহমান স্টোর নামের মুদি দোকানকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর আদালত ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পণ্যের দাম যাচাই করে।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন