রাজধানীতে গড়ে ওঠা অনেক নামীদামী রেস্টুরেন্ট আর সুপারশপে গিয়ে প্রায়ই প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। বিভিন্ন খাবারে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ ছাড়াও মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার বিক্রিরও প্রমাণ মিলছে অহরহ। মেয়াদ পেরুনো খাবারের গায়ে নতুন স্টিকার লাগিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত অনেকে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তা।
বাইরে চাকচিক্য, ভেতরে প্রতারণার চিত্র ! রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে গিয়ে বিভ্রান্তির মুখে পড়ছেন গ্রাহকরা। মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবারের গায়ে মেয়াদ বাড়িয়ে নতুন স্টিকার লাগানো হয়েছে। এ ধরণের কাজ গ্রাহকদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেকটাই হুমকিস্বরুপ।
ভুক্তভোগীরা জানান, 'খাবারের প্যাকেটে একটি স্টিকারের উপর আরেকটি স্টিকার। একটি প্যাকেটের ডেট আজ শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আরেকটি নতুন স্টিকার লাগিয়ে তিন দিন বাড়িয়ে নিচ্ছে। সবকয়টি প্যাকেটের মধ্যে দুইটা করে স্টিকার লাগানো। এটা একটা ক্রাইম।'
এমন ঘটনায় রেস্টুরেন্টে দায়িত্বরত সুপারভাইজার নিজেদের ভুল স্বীকার করলেন। বিএফসির সুপারভাইজার মোস্তফা হোসেন বলেন, 'আমি আমাদের ভুল স্বীকার করছি। এটা হয়তো ভুল করে আমাদের হেড অফিস থেকে এসেছে। এটা বড় একটা অপরাধ।'
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন বলছে, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জরিমানা আদায় ও অভিযোগকারীকে সে জরিমানার ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, 'যেখানে মেয়াদউর্ত্তিণ খাবার বা ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে জরিমানা করা হচ্ছে। কেউ যদি অভিযোগ করে এবং সেই অভিযোগের প্রমাণ মিললে যদি জরিমানা করা হয় তাহলে সেই জরিমানার অর্ধেক সেই অভিযোগকারী পায়।'
র্যাব জানায়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো সময় প্রয়োজন। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, 'অনেক নামীদামী রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখেছি মেয়াদউর্ত্তিণ খাবার বিক্রি করছে। তাদের জরিমানা করেছে।'
মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব খাবার অনেক সময় প্রাণঘাতী হতে পারে বলেও সংশয় এই বিশেষজ্ঞের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, 'এধরণের খাবার খেলে ভয়ংকর ডায়রিয়া হতে পারে। এর থেকে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।'
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত দুই বছরে এই দুটি সংস্থার জরিমানা আদায়ের পরিমাণ ১৭ কোটি টাকারও বেশি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-
সাল: ২০১৬-১৭
মোট অভিযোগ: ৬১৪০ টি
নিষ্পত্তি: ৫৮০৪ টি
জরিমানা আদায়: ৬ কোটি ৮২ লক্ষ ১১ হাজার ৯২০ টাকা।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত-
সাল: ২০১৬-২০১৮
মোট অভিযান: ৮২৬ টি
মোট মামলা: ১২৪৬ টি
মোট জরিমানা: ৯ কোটি ৭০ লক্ষ ৫২ হাজার ৯ শ' টাকা।
সংশ্লিষ্টদের দাবি নিয়মিত মনিটরিং তো বটেই, গ্রাহকদের সচেতনতাও পারে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন