জ্যৈষ্ঠর প্রথম সপ্তাহ। আম পাকার মৌসুম শুরু। আম পাড়ায় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটিও উঠে গেছে। ঢাকার বাজারে আসতে শুরু করেছে রাজশাহীর আম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম আসতে আরও কয়েকদিন দেরি হবে। সেখানে গুটি জাতের আপ পাড়া শুরু হবে ২৫ মে থেকে।
মাসখানেক আগে থেকেই অবশ্য দোকানগুলোতে দেখা মিলছিল আমের। কিন্তু কৃত্রিমভাবে ফল পাকাতে ইথেফোন ব্যবহার করার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার প্রভাব পড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। এই সময়ে আম কেনায় যে স্বাভাবিক প্রবণতা ছিল, সেটি এখন নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
যদিও বিশেষজ্ঞরা এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও বলছে ইথেফোন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। ১৯৭৩ সালে থেকেই এটি উন্নত বিশ্বেও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে ফল পাকাতে।
ভারতেও এটি অনুমোদিত। কিন্তু বাংলাদেশে যারা ফলবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে তারা এই বিষয়টি নিয়ে ধারণাও রাখেন না।
বিক্রেতারা জানান, এখন গোপালভোগের মৌসুম শুরু হয়েছে। অল্প পরিমাণে আসতে শুরু করেছে ক্ষীরশাপাতিও। আর মৌসুমের নতুন ফল বলে তাই দাম বেশি। বর্তমানে বাজারে মানভেদে গোপালভোগ খুচরা পর্যায়ে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দর হাঁকছেন বিক্রেতারা।
অন্যান্য বছর বেশি দাম হলেও ক্রেতার অভাব ছিল না। কিন্তু দোকানে এবার সেভাবে ভিড় নেই। কারণ জৈষ্ঠ্যের শুরুতেই গণমাধ্যমগুলোতে বেশ তোড়জোড় করে প্রচার করা হয়েছে ইথেফোন হরমোন স্প্রে দিয়ে আম পাকানোর বিষয়টি।
নগরীর বেশ কিছু ফলের আড়তে অভিযান চালিয়েছে তিন হাজার মণ আম ধ্বংসের পাশাপাশি কারাদণ্ড হয়েছে ২৪ জনকে।
খুচরা ফল বিক্রেতা সেলিম বলেন, ‘জৈষ্ঠ্যে মাসে আম পাকে এইডা কে না জানে? আইজ জৈষ্ঠ্যে মাসের আট তারিখ। বাজারে এহন কমবেশি রাজশাহীর আম আছে। কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করে না। কয় বিষ দিছি আমে।’
গ্রেগরিয়ন ক্যালেন্ডারের মে মাসের মাঝামাঝি সময়েই শুরু হয় বাংলা পঞ্জিকা জ্যৈষ্ঠ মাস। এই মাসেই পাকে ফল। ২০ মে থেকে রাজশাহীর বাগানগুলোতে গোপালভোগ আম পাড়া শুরুও হয়েছে। এখন সেগুলো পেড়ে বাজারে তুলছেন বাগান মালিকরা।
সাহেববাজার ছাড়াও নগরীর শালবাগান ও লক্ষ্মীপুর বাজারে আম উঠেছে। পাইকারি আম বিক্রি হচ্ছে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারেও। ইতোমধ্যে রাজশাহীর আশপাশের বাজারগুলোতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশ আম ব্যবসায়ীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছে।
কলাবাগানের একটি ফলের দোকানে আম কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রিস মির্জার সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাসা থেকে আম কেনার জন্য বলেছিল, কিন্তু কিনতে ভয় পাচ্ছি। আমি যে আম কিনে বাসায় নেব সেটা ইথোফেন দিয়ে পাকানো না সেটার নিশ্চয়তা কে দেবে? তবে দোকানদার বারবার বলছিল তার দোকানের আম রাজশাহীর। কিন্তু তাও ভয় লাগে, তাই কেনা হলো না।’
জুনের প্রথম সপ্তাহে বাজারে উঠতে শুরু করবে ল্যাংড়া ও ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর)। দিন যত গড়াবে ভিন্ন স্বাদ ও নানা জাতের আমে ছেয়ে যাবে রাজশাহীর বাজারগুলো।
তবে সবচেয়ে বেশি কদর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের। গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত ছাড়াও বোম্বাই, ফজলি, আমরুপালি, ক্ষুদি ক্ষিরসা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, ও মোহনভোগ জাতের আম আসবে রাজধানীতে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন