রমজানের শুরু থেকে গরুর মাংস নিয়ে ঘটে চলছে নানা ঘটনা। সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করা মূল্যের অতিরিক্ত দাম আদায়ের দায়ে জরিমানা গুনেছেন অনেক সুপার শপ ও মাংস বিক্রেতা। কিন্তু তাতে দমে যায়নি তারা। নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রির মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখা হলেও অন্যভাবে ‘ঠেকিয়ে’ চলছে বেশি দাম আদায়।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি মাংসের দোকানে ঝুলছে সিটি করপোরেশন থেকে নির্ধারণ করা মূল্য তালিকা। কোথাও কোথাও নির্ধারিত ৪৫০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। তবে এই দামে মাংস কেনা ক্রেতাদের জন্য সুখপ্রদ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে মাংস কিনতে হচ্ছে তাদের।
ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে ক্রেতারা জানান, ৪৫০ টাকায় গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে বটে, কিন্তু তা মানসম্মত নয়। মাংসের চেয়ে হাড় ও চর্বির পরিমাণ বেশি।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে মাংস কিনতে এসেছেন জহির উদ্দিন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘৪৫০ টাকা দাম বলা হলেও আসলে মাংস কিনতে হয় ৫০০ টাকায়। সাড়ে চার শ টাকার মাংস কেনার চাইতে না কেনা ভালো। হাড় ও চর্বিবহুল মাংস নিয়ে লাভ কী? তাই বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা বেশি দেই।’
বিক্রেতাদের এই কৌশলকে ক্রেতা ঠেকিয়ে অতিরিক্ত দাম আদায় বলে অভিহিত করেন সুজন আকন নামের একজন ক্রেতা। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘দাম লেখা সাড়ে চার শ। কিন্তু সাড়ে চার শ টাকায় মাংস পাওয়া যায় না। টাকা দিয়ে কে আর হাড্ডি-চর্বি কেনে। ওরা ইচ্ছে করেই এগুলো করে। ঠেকিয়ে দাম বেশি নিচ্ছে। ৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে নিচ্ছে দাম।’
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাংস বেচার অভিযোগ মানতে নারাজ বিক্রেতারা। তবে মাংসের সঙ্গে হাড়-ছর্বি থাকার কথা অস্বীকার করেননি তারা।
টাউন হল বাজারের মাংস বিক্রেতা দুলাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গরুর মাংস ৪৫০ টাকাই। মাংস কিনতে গেলে হাড্ডি-চর্বি তো নেওয়া লাগবই। গরুর গায়ে কি শুধু মাংস থাকে?’
দুলাল বলেন, ‘সবাই সলিড মাংস চায়। খালি মাংস নিতে গেলে দাম তো বেশি পড়বই। আর আমরা খালি মাংস বেচি না। মাংস নিতে হইলে হাড্ডি-চর্বি সবসহ নেওয়া লাগব। নাইলে এগুলা কি আমরা বাসায় নিয়া যামু?’
তাদের কথা, ক্রেতা তার পছন্দ অনুযায়ী মাংস নিলে দামও দিতে হবে বিক্রেতাকে পুষিয়ে।
দুলালের কথায় সুর মেলান শিয়া মসজিদ বাজারের মাংস বিক্রেতা আবু সাদ। তিনি বলেন, ‘দাম ঠিক করা হইছে আমরা জানি। প্রথম রোজা থেকাই আমরা সাড়ে চার শ কইরা গরুর মাংস বেচি। কেজিতে মাংস নিতে হইলে আড়াই শ গ্রাম হাড্ডি নেওয়া লাগব। হাড্ডি কম চাইলে দাম বাড়াইয়া দিতে হইব। কাস্টমার যেমনে চাইব আমরা তেমনে বেচি। এহানে দাম বেশি-কমের কিছু নাই।’
নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য বাজারেও। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ আশপাশের ছোটখাটো বাজারের মাংসের দোকানের চিত্র একই। দোকানের সামনে ‘গরুর মাংস ৪৫০ টাকা’ মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে দাম নেয়া হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা দরে।
অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনের ধার্য করা দামে মাংস কিনে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যেখানে মাংসের তুলনায় হাড় ও চর্বির পরিমাণ থাকছে বেশি। বিশেষ করে যারা অল্প পরিমাণ মাংস কেনে, তারাই প্রতারিত হচ্ছে বেশি। বিক্রেতা যা দেন তা-ই তাদের নিতে হয়। তাদের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন