সকালে কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ। আর দুপুরের পর তো রোদের উত্তাপে বাইরে টেকাই দায়। কিন্তু সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রোদ-বৃষ্টি সব তুচ্ছ করে বিপণি বিতানমুখী নগরবাসী। ঈদের কেনাকাটায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটগুলোতে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। এতে শুক্রবার দুপুরের পরই মার্কেটসহ আশপাশের স্থানগুলো ক্রমান্বয়ে রূপ নেয় জনসমুদ্রে। যার ফলে মানুষ ও যানবাহনের চাপে বিপণি বিতানের সামনের রাস্তাগুলো যানজটে প্রায় নিশ্চল।
চলছে ঈদের কেনাকাটার ধুম। ঈদের আগে শুক্রবার আছে মাত্র আর একটি। যেহেতু সেটি ঈদের পূর্বের দিন তাই এর পূর্বেই রাজধানী ছাড়বে ঘরমুখো মানুষ। তাই গতকাল শুক্রবারেই কেনাকাটায় ঝাঁপিয়ে পড়েন নগরবাসী। রাজধানীর সব মার্কেটে ছিল উপচেপড়া ভিড়। গাউছিয়া, নিউমার্কেট, ধানমণ্ডি হকার্স, মৌচাক, যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরার মতো জনপ্রিয় মার্কেটগুলোতে ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। নিম্ন আয়ের মানুষ কেনাকাটা করতে ভিড় জমায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে। নগরী রূপ নেয় জনসমুদ্রে। দৃশ্যটা এমন যেন সাবাই এসেছে ঈদ বাজারে।
নিরাপত্তার দায়িত্বে বসুন্ধরা সিটিতে থাকা সাবেক সেনাসদস্য আবদুল আজিজ জানান, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ভিড় ততই বাড়ছে। ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। দুপুরের আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে প্রায় আড়াইলাখ বর্গফুটের বিশাল পার্কিং।
ভিড়ভাট্টা ঠেলে নিউ মার্কেটে প্রবেশের পরও দেখা যায় একই চিত্র। মানুষ আর মানুষ। তবে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভিড় বেশি হলেও বিক্রি তেমন নেই। ঈদের এখনো ৮ দিন বাকি। ক্রেতাদের অধিকাংশই এখনো কিছু কিনছেন না। পছন্দের জিনিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন এ দোকান থেকে ও দোকানে। কোনোটা পছন্দ হলে ছুটছেন অন্য দোকানে। যদি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়া যায়।
মেয়েদের রেডিমেড সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বেশি ঘটছে বলে জানান পোশাক বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটির ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, ছেলেদের পাঞ্জাবি ও প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ভালোই। তবে মেয়েদের পোশাক বিক্রি এখনো সে অর্থে জমে ওঠেনি। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে বিক্রি বাড়বে বলে জানান তিনি।
এদিকে গাউছিয়া ও চাঁদনী চকে একই অবস্থা। সেখানে কিশোরী-তরুণী-নারীদের ভিড়ে পা রাখাই দায়। গাউছিয়ার অধিকাংশ দোকানেই বিক্রি হয় সেলাই ছাড়া থ্রিপিস। কাটিং করা থ্রিপিস কিনে দর্জির দোকানে ক্রেতা পছন্দ অনুযায়ী সেলাই করতে পারেন। তাই কেনাবেচার ধুম লেগেছে গাউছিয়ায়। রেডিমেড যে জামার দাম দেড় থেকে ২০ হাজার টাকা সেই জামা সেলাই ও কারুকাজ ছাড়া এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৬ হাজার টাকায়। তবে সেই দিক থেকে ব্যতিক্রম আজিজ সুপার মার্কেট। এখানে ভিড় ও বিক্রি বেশি। সাধারণ তরুণ-তরুণী এবং শিক্ষার্থীরাই এ মার্কেটের দোকানগুলোর ক্রেতা।
জানা গেছে, চাঁদনী চকে জর্জেটের ওপর কাজ করা থ্রি পিস, বুটিকস আইটেমের থ্রি পিস, লন, ভয়েল ও শার্টিনের থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি। চাঁদনী চকে ড্রেস কেনা শেষে গাউছিয়া, নিউমার্কেট থেকে গহনা আর ব্যাগ কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মনিরা খাতুন। তিনি বলেন, শুধু নিজের কেনাকাটাই নয় ঈদের সময় আত্মীয় স্বজন সবার জন্যই কেনাকাটা থাকে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ার সবাই মার্কেটে আসায় অতিরিক্ত ভিড় হয়েছে। ফলে কোনো কিছুই ভালো করে দেখে কেনার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া এসব মার্কেটে তুলনামূলক দাম কম পাওয়া যায়।
এদিকে মার্কেটের পাশ দিয়ে যাওয়া কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতে ভেসে আসছে বিক্রয় কর্মীদের হাঁকডাক। বাহারি নিত্য নতুন ডিজাইনের পাশাপাশি দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় চাঁদনী চকে ক্রেতাদের উপস্থিতি বছরজুড়েই থাকে। আর ঈদে তো কথাই নেই। আজিজ সুপার মার্কেটের পোশাক বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ব্যাঙয়ের ব্যবস্থাপক আলী হায়দার খান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের পরে শিক্ষার্থীরা বাড়ি যাবেন। তাই তাদের শেষ সময়ের কেনাকাটা চলছে। আজিজে বরাবরই মধ্য রমজান থেকেই বিক্রি ভালো থাকে।
ধানমণ্ডির বিভিন্ন মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কেও ছিল ক্রেতার ভিড়। ঈদ মার্কেটের বেচাকেনায় পিছিয়ে নেই বুটিক-বাটিক দোকানগুলোও। তারাও বাহারি কালেকশনের পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছে। জমে উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটার জায়গা ফুটপাতও। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ২০ রোজা পর্যন্ত ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকলেও এখন বিক্রি-বাট্টা অনেক বেড়েছে। শেষ মুহূর্তে ঈদের কেনাকাটা করতে সবাই মার্কেটে ছুটে আসছেন। সরকারি ছুটি থাকায় এবং তাদের জন্য গতকাল ঈদের পূর্বে শেষ শুক্রবার হওয়ায় তারা কেউ কেনাকাটার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না। অন্য ছুটির দিনের চেয়ে গতকাল ছিল অন্য রকম।
দিনটা শুরু হয়েছিল যদিও ঢিমেতালে, কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল প্রাণচাঞ্চল্য। বাড়ছিল রাজধানীতে বিপণি বিতানমুখো মানুষের ঢল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল ও সন্ধ্যা নামতেই রাজধানীর নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চকসহ আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। রাজধানীর মধ্যবিত্তের কেনাকাটার অন্যতম জনপ্রিয় এলাকায় ঈদ সামনে রেখে পা ফেলার জো নেই। নগরীর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা নিজ এলাকায় যতই কেনাকাটা করুক না কেন, গাউছিয়া-নিউ মার্কেট এলাকায় এক চক্কর দেবেই। হয়তো এ জন্যই ঈদের সময় নগরীর এই এলাকা থাকে সবেচেয়ে বেশি জমজমাট।
ধানমণ্ডির শংকর থেকে মেয়ে শায়লাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন গৃহিণী সাদিকা জান্নাত হোসেন। গাউছিয়া থেকে থান কাপড় কিনতে কিনতে সাদিকা বলেন, ‘রমজানের শুরু থেকেই আসছি। পাকিস্তানি থ্রিপিস কিনেছি। থান কাপড়ও কিনেছি।’ গতকাল শুক্রবার চাঁদনী চক, নিউ মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট ঘুরে দেখা যায় মানুষের বিপুল উপস্থিতি। তাদের মধ্যে নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। দেশি-বিদেশি সব ধরনের থান কাপড় ও তৈরি পোশাক, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর নানা উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে এসব মার্কেটে।
যারা একটু ঘুরে ঘুরে, দরদাম করে কিনতে পছন্দ করে, তাদের কাছে এ মার্কেটগুলো আকর্ষণীয়। ঈদ উপলক্ষে এসব মার্কেটে মেয়েদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, আনস্টিচ থ্রিপিস, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকস, গয়না, দর্জিবাড়ি সব কিছুই রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে কম দামের পোশাকের পাশাপাশি বেশি দামের ‘এক্সক্লুসিভ’ পোশাকও মেলে। এসব সাধারণত ৪৫০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে কেনা যায়। মানুষের বিপুল উপস্থিতি থাকলেও বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন